ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাস-অপকর্ম

আমি বিস্মিত যে, শিবিরের সন্ত্রাসের নামে ইন্টারনেটে যেভাবেই সার্চ দিইনা কেন--পাওয়া যায় শুধু তাদের কর্মকাণ্ডের পজেটিভ ছবি-ভিডিও কিংবা উল্টো ছাত্রলীগ -আওয়ামীলীগ কর্তৃক তাদেরই আক্রান্ত বা আহত-নিহত হবার নানান দৃশ্য? অবাক হবারই পালা, যে শিবিরের বিরুদ্ধে এত সন্ত্রাসের অভিযোগ অথচ ছাত্রলীগের  ন্যায় তাদের বিরুদ্ধে চাক্ষুষ কোন তথ্য-প্রমাণ বা সশস্ত্র হামলার  কোন ছবি-ভিডিও সার্চ দিলে পাওয়াই যায়না? কারণ কী এবং কেন, কিছুই বুঝলাম না? 

অথচ ছাত্রলীগের নামে ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই ছাত্রলীগের কর্মীদের হাজারো সন্ত্রাসী ছবি-ভিডিওসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার খবর চলে আসে। ছাত্রলীগের কর্মীরা রামদা, কিরিচ, চাপাতি, পিস্তল, বন্দুক, লাঠি ছাড়াও হরেক রকম অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বা সন্ত্রাস করছে! এসব কি আসলেই কাকতালীয় ব্যাপার নাকি আন্তর্জাতিক বা গুগোলীয় চক্রান্ত! 

তবে হ্যাঁ, শিবিরের সন্ত্রাসের নামে সার্চ দিলে মাঝে মাঝে পাওয়া যায় শুধু ২০১৩ সালে ১৮/১৯ দলীয় জোট বা শিবির-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের সময় সংঘটিত সন্ত্রাসের কিছু ছবি-ভিডিও অর্থাৎ পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িভাংচুর, পটকা ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, পথ অবরোধ, টায়ার জ্বালানো ইত্যাদির চিত্র। কিন্তু তাদের কারো হাতে ছাত্রলীগের মত কোন অস্ত্রই দেখা যায় না কিছু লাঠিসোটা ছাড়া!! শুধুমাত্র ২০১৩ সালে আন্দোলনের নামে হরতাল-অবরোধে হঠাৎ ছাত্রলীগের ন্যায় আগ্রাসী-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় ''যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক তথ্য ও মতামত সরবরাহকারী সংস্থা'' কর্তৃক বিশ্বের ৩য় সন্ত্রাসী সংগঠনের খেতাবপ্রাপ্ত ভদ্র শিবিরের সন্ত্রাসী ছবি-ভিডিও খুঁজে না পাওয়াটা সত্যই বিস্ময়কর! শিবিরের জন্মসাল ১৯৭৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত একই অবস্থা, ছাত্রলীগের মত তাদের সন্ত্রাসী দলীলপত্র আদৌ নেই ইন্টারনেটে। 

আর কিছু কিছু মিডিয়ায় ছাত্রশিবির কর্তৃক সংঘটিত সন্ত্রাসের নামে প্রকাশিত বিরোধীপক্ষের কিছু আহত-নিহতের ছবি দেখা যায় বটে; কিন্তু সরাসরি হামলাকারী হিসেবে ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র কাউকে ছবিতে আদৌ খুঁজে পাওয়া যায়না। এর ফলে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, ওইসব মিডিয়া সরাসরি সশস্ত্র হামলার প্রামাণ্য ছবি-ভিডিও ব্যতীতই সন্দেহমূলকভাবে সন্ত্রাসের জন্য শিবিরকে অভিযুক্ত করেছে মাত্র!! তবে শিবিরকর্মীদের হাতে লাঠি, ইট-পাটকেল ছাড়া কোন অস্ত্র বা সশস্ত্র হামলার দৃশ্য খুঁজে  না পাওয়ায় আমার তো আক্কেল গুড়ুম! তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের বা অপকর্মের অকাট্ট তথ্য-প্রমাণতো আমার দরকার? কারণ এই ব্লগে হলুদ সাংবাদিকতা বা গুজবভিত্তিক প্রমাণহীন অভিযোগের সুযোগ নেই। তবুও ছাত্রলীগের মত অকাট্ট তথ্য-প্রমাণ বা ছবি-ভিডিও খুঁজে না পেলেও তাদের বিরুদ্ধে মিডিয়ার অভিযোগসংক্রান্ত কিছু তথ্য দিতেই হলো। 

আমাদের অনুরোধ- যাদের  সংগ্রহে ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাস এবং নারীনির্যাতন বা ধর্ষণ, টেণ্ডারবাজী, চাঁদাবাজি, মাতলামী ইত্যাদি অপকর্মসংক্রান্ত অকাট্ট তথ্য-প্রমাণ বা ছবি-ভিডিও আছে, তারা দয়া করে সেসব ডকুমেন্ট আমাদের ইমেইলে পাঠিয়ে দিন যাতে দেশ-জাতি তাদের কুকীর্তি জেনে তাদের বিষয়ে সজাগ হতে পারে।  
===========================================================
বিশ্বের শীর্ষসন্ত্রাসী সংগঠনের তৃতীয় স্থানে ছাত্রশিবির

বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্র শিবিরের নাম। জামায়াতে ইসলামীর এ ছাত্র সংগঠনটি শীর্ষ ১০ সক্রিয় সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্যে মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক তথ্য ও মতামত সরবরাহকারী সংস্থা 'আইএইচএস জেনস ২০১৩ গ্লোবাল টেরোরিজম অ্যান্ড ইনসারজেন্সি অ্যাটাক ইনডেক্স' এ তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে থাইল্যান্ডের বারিসান রেভ্যুলুসি ন্যাসিওনাল প্রথম এবং আফগানিস্তানের তালেবানের অবস্থান রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এছাড়া চার নম্বরে আছে ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। আর সবশেষ নম্বরে রয়েছে নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নাম।

--------------------------------------------------------------------------------------------

 শিবিরকে জড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিষ্কার * রিপোর্টে রয়েছে সীমাহীন গোজামিল * প্রশ্ন, এই কারসাজিটা কার?
জেনসের সন্ত্রাস তালিকা: বাংলাদেশে ভয় দেখানোর রাজনীতি
গৌতম দাস: গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে জামাতের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দুনিয়ার এই মুহূর্তে শীর্ষ দশ অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গ্রুপের তালিকার (Top 10 most active non-state armed groups in 2013) মধ্যে তিন নম্বরে রেখে এই সংগঠনটি একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এটা নাকি কেবল গত বছরের প্রবণতা লক্ষ্য করে বানানো তালিকা। কিন্তু কিসের, কোন ফ্যাক্ট বা ফিগারের ভিত্তিতে বা কোন মানদ-ে তাদের এই সিদ্ধান্ত তার কোন হদিস জানা যায় না। ফলে এই নাম অন্তর্ভুক্তি পক্ষপাতদুষ্ট বা খামখেয়ালিপনা বলে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এতে পরিষ্কার। কিন্তু যেটা বোঝা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের এই যুগে এই ধরনের তালিকার মধ্যে নাম ঢোকানোর পেছনকার কারসাজি। এই ক্ষেত্রে একধরনের জবরদস্তি কাজ করেছে, সন্দেহ নেই।
২. দশ শীর্ষ বলে সাজানো হয়েছে কিন্তু শীর্ষকে রাখা হয়েছে নবম স্থানে: জেনস সেন্টারের এই রিপোর্টের শুরুতেও স্বীকার করে বলা হয়েছে Terrorism spike seen in Arab Spring countries; Attacks in Syria almost double in one yearÕ|’। অর্থাৎ গত একবছরে টেররিজমের কামড় দেখা গিয়েছে আরব স্প্রিং ঘটা দেশগুলোতে, আর সিরিয়ার সন্ত্রাসী হামলার বৃদ্ধি ঘটেছে দ্বিগুণ। এই হিসেবে সিরিয়ান গ্রুপ জাবাত আল-নুসরা’র নাম থাকার কথা শীর্ষ দশ সংগঠনের নামের প্রথমে। কিন্তু রাখা হয়েছে নয় নম্বরে। নিচে দেখুন। অর্থাৎ নিজেই নিজের রিপোর্টের শুরুতে যা বলেছে এর উল্টাটা করেছে তালিকা সাজানোর সময়। দেখুন: 10 most active non-state armed groups in 2013 2013 সালের শীর্ষ দশ অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গ্রুপ;
1. Barisan Revolusi Nasional (Thailand), 2. Taliban, 3. Islami Chhatra Shibir (Bangladesh), 4. Communist Party of India - Maoist, 5. Al-Qaeda in Iraq, 6. Harakat al-Shabaab al-Mujahideen (Al-Shabaab), 7. FARC (Colombia), 8. New Peoples Army (Philippines), 9. Jabhat al-Nusra (Syria), 10. Unified Communist Party of Nepal - Maoist
৩. হামলার প্রধান নির্দেশিকাতে (Key Attack Index) দক্ষিণ এশিয়াই নেই অথচ সংগঠনের তালিকা করার সময় আছে বাংলাদেশ: ওই রিপোর্টেই একটু পরে আছে, , Key highlights from the IHS Janes 2013 Global Terrorism & Insurgency Attack Index অর্থাৎ চোখে পড়ার মত সন্ত্রাসী আক্রমণের নির্দেশিকা বা সূচক বলে যে পাঁচটা ফেনোমেনাকে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো;
ক। Global: Significant rises in global militant and non-militant fatalities
খ। Arab Spring countries see attacks spike
গ। Syria: Attacks almost double between 2012 and 2013
ঘ। Iraq: Suicide attacks quadruple and Al-Qaeda in Iraq re-enters the top five most active non-state armed groups in the world
ঙ। Sub-Saharan Africa: Terrorism fatalities rise
এই পাঁচটার প্রথমটা গ্লোবাল বা সামগ্রিক দিক থেকে, আর বাকি চারটা দেশ বা অঞ্চল হিসেবে; আঞ্চলিক ভাগ হলো, ‘সন্ত্রাস’, আরব স্প্রিং এর দেশগুলো, এরপর সিরিয়াকে আলাদা করে, এরপর ইরাক আর সবশেষে সাব-সাহারান আফ্রিকা অর্থাৎ, সোমালিয়া থেকে শুরু করে মালি, নাইজিরিয়া পর্যন্ত দেশগুলো। তাহলে দেখা যাচ্ছে গত এক বছরের মুখ্য তৎপরতার স্থানের নির্দেশিকায় দক্ষিণ এশিয়ার নাম গন্ধ নাই, ফলে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের নামও নাই। অর্থাৎ অন্যগুলো বা যা আছে তাদের তুলনায় উল্লেখযোগ্য নয়।
তাহলে বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম আসল কোথা থেকে? বোঝাই যাচ্ছে একটা ভুইফোঁড় ঘটনা ঘটেছে এখানে, বাইরে থেকে একটা নাম এনে জবরদস্তি ঢুকানো হয়েছে।
সার কথায়, এই রিপোর্ট নিজের Key Attack Index এর সাথে Top 10 most active non-state armed groups-এর তালিকার সঙ্গে কোন সামঞ্জস্য রাখেনি। যদি সন্ত্রাসী আক্রমণের নির্দেশিকাকে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের ভূমিকার বিচারের মানদ- ধরি তাহলে তালিকায় বাংলাদেশ বা শিবির অন্তর্ভুক্ত করার কোনো যুক্তিই নাই। দক্ষিণ এশিয়া বা বাংলাদেশ ঘটনা হিসেবে না থাকলেও দশ শীর্ষ সংগঠনের তালিকায় বাংলাদেশ ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম ঢুকানো নিছকই একটা জবরদস্তি। রাজনৈতিক বদ মতলব ছাড়া এর আর অন্য কোন তাৎপর্য নাই।
৪. শীর্ষ দশ সংগঠনের তালিকা বানাবার ক্রমিক নির্ণয়ের মানদ-টাই ভিত্তিহীন: এই তালিকায় শীর্ষে রাখা হয়েছে থাইল্যান্ডের বরিসন গ্রুপের নাম। কোন ক্রম মেনে কার পরে কে হতে পারে তা ঠিক করার মানদ- যে এখানে  নেই, কাজ করেনি, তা স্পষ্ট।
কিছু অবিশ্বাস্য ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ দিক এখানে তুলে ধরছি -
ক. একথা প্রতিষ্ঠিত এবং এই রিপোর্টও স্বীকার করে, দুনিয়াজুড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতার শীর্ষে আছে আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কিত কোন না কোন দেশীয় গ্রুপ; যেমন, Jabhat al-Nusra (Syria), Al-Qaeda in Iraq, আফ্রিকার আল-শাবাব (Al-Shabaab) অথবা পাক বা আফগান তালিবান ঞধষরনধহ। এই চার সংগঠনের মধ্যে কোনটা গত বছর তৎপরতায় শীর্ষে ছিল তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। এই রিপোর্টই সে তর্ক মিটিয়ে বলছে সিরিয়ার আল নুসরা শীর্ষে। তাহলে থাইল্যান্ডের বরিসন গ্রুপকে শীর্ষ স্থানে রাখা হচ্ছে কোন যুক্তিতে? আবার গত বছরের সক্রিয়তার দিক থেকে তালেবানের চেয়েও সক্রিয় ছিল সিরিয়ান আল নুসরা। এবং এখনও তাই। অথচ তালিবানের ভাগ্যে জুটেছে দ্বিতীয় অবস্থান আর আল নুসরার নবম স্থান।
খ. আবার এক তালিবান ছাড়া আলকায়েদা সংশ্লিষ্ট বাকি তিন সংগঠন জাবাত আল-নুসরা ((Jabhat al-Nusra - Syria, ইরাকের আল কায়দা (Al-Qaeda in Iraq), আফ্রিকার আল শাবাব(Al-Shabaab)|। অথচ দশ শীর্ষ তালিকায় এদের স্থান যথাক্রমে নবম, পঞ্চম ও ষষ্ঠ। ওদিকে ছাত্রশিবিরের স্থান নাকি তৃতীয়!!! অর্থাৎ এই রিপোর্ট দাবি করছে, গত বছর সংগঠন হিসেবে জাবাত আল নুসরা, ইরাকের আল কায়েদা ও আফ্রিকার আল শাবাবের চেয়েও ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎপরতা ভয়ঙ্কর ছিল। এই ধরনের মূল্যায়ন দিবাস্বপ্ন কিম্বা উন্মাদ কল্পনাতেও আঁকা সম্ভব না।
গ. এই জাতীয় মৌলিক তথ্যের গরমিলে ভরা এই রিপোর্ট। এ রকমই আর একটা: সপ্তম নম্বরে রাখা হয়েছে কলম্বিয়ার FARC (Colombia)গেরিলাদের। ল্যাটিন আমেরিকা বা দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বামপন্থী তবে ‘লিবারেশন থিওলজি’ অনুসরণ করা এই সশস্ত্র গ্রুপ বহু পুরনো, তাদের উত্থান আশির দশকে। কিন্তু সাম্প্রতিক খবর হলো এরা কিউবার মধ্যস্থতায় গত প্রায় দুবছর ধরে বর্তমান কলম্বিয়া সরকারের সাথে আলোচনা নিগোশিয়েশন চালাচ্ছে। সামরিক তৎপরতা অনানুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত।
যারা আল জাজিরা টিভি ফলো করেন তারা কমবেশি এ ব্যাপারে আপডেটেড, অবগত। এখন এই গ্রুপের গত বছরের তৎপরতাকে কেন শীর্ষ সন্ত্রাসী তৎপরতায় আনা হলো? শুধু তাই না, একে সপ্তম অবস্থানে রাখা হয়েছে। আর জীবন্ত জাবাত আল নুসরার (সিরিয়া) অবস্থান হল নবমে। কী মানে দাঁড়াল? সিরিয়ার আল নুসরার চেয়েও সক্রিয় ও জীবন্ত তৎপরতায় গত বছর জড়িত ছিল কলম্বিয়ার ফার্ক গেরিলারা! এটা কি বিশ্বাসযোগ্য একটা তথ্য?
কমবেশি ঠিক একই কা- করা হয়েছে নেপালের মাওবাদীদের প্রসঙ্গে। যদিও একে দশম স্থানে রাখা হয়েছে। কিন্তু এটা তো আদতে সামরিক দিক থেকে এখন সক্রিয় সংগঠনই না। গত চার বছর ধরে তাদের মূল অংশটাই আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সারেন্ডার করেছে, কর্মীরা সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছে, দলের নেতারা নেপালে সরকার চালিয়েছে প্রায় একবছর, প্রাক্তন যোদ্ধাদের সামরিক বাহিনীতে নেয়া হবে কি না এ নিয়ে বিরাট রাজনৈতিক বিতর্ক ওঠেছে ইত্যাদি। এরপর দল দুভাগ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন অংশই সশস্ত্র তৎপরতায় ফিরে যাবে বা গিয়েছে এমন কোন খবর আমরা এখনও দেখিনি, জানা নাই। তারা আবার সামরিক কর্মকা-ে তারা ফিরতে পারে কি? অবশ্যই পারে। কিন্তু জেনস সেনটারের এ তালিকা তো পটেনশিয়ালিটির তালিকা নয়, গত বছরের সামরিক তৎপরতায় কারা সক্রিয় ছিল তাদের তালিকা। এই তালিকায় নেপালের মাওবাদীদের নাম আসায় পাঠক নিজেই বিচার করতে পারেন এটা কতটা বেমানান।
৫. গণ-সাংগঠনিক তৎপরতা বনাম সশস্ত্র তৎপরতা: গণ-সাংগঠনিক কথার অর্থ হলো যেখানে রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে নিয়ে, অর্থাৎ রাজনৈতিক তৎপরতা হবে প্রকাশ্যে। তার চেয়ে বড় কথা, হবে দিনের প্রকাশ্য আলোয়, জনগণের সমাবেশ ও মিছিলে, সরব স্লোগানে। কোন ধরনের ফায়ার আর্মস (বন্দুক, পিস্তল বা এর চেয়ে বড় গুলির ছোঁড়ার অস্ত্র অথবা গ্রেনেড) এখানে ব্যবহারের কথা চিন্তাও করা যাবে না। কারণ এখানে মূল লক্ষ্য শুধু জনমতকে প্রভাবিত করে নিজের গণদাবির পক্ষে আনা নয়, বরং জনগণ যেন নিজের তাগিদে মিছিল সমাবেশ মিটিংয়ে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পূর্ব শর্ত হিসেবে এই প্রক্রিয়া গণশক্তি পরিগঠনের জন্যও অতি আবশ্যিক একটি প্রক্রিয়া। আর ফায়ার আর্মস আর জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ দুটো জিনিস পরস্পরবিরোধী। এই দুটো জিনিস কখনও একসাথে একপাত্রে থাকতে চায় না, স্বস্তিবোধ করে না। অতএব, গণ-আন্দোলনের সীমা বা মাত্রার মানদ- হলো, যতই পুলিশী বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন আসুক, ফায়ার আর্মস ছাড়া রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে। এজন্যই এটা মাস মুভমেন্ট। গণআন্দোলন ও গণসংগ্রাম। এটা কোন নৈতিক তর্ক নয়, রাজনৈতিক কৌশলের তর্ক নয়। এর মানে এই নয় যে, সশস্ত্র সংগ্রাম নিন্দনীয়। আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অহিংস না হলে তাকে নিন্দা করতে হবে। রাজনৈতিক প্রশ্নকে নৈতিক প্রশ্নে রূপান্তর মূলত গণবিরোধী ও নিপীড়কের পক্ষাবলম্বন। যে কারণে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী গান্ধির অহিংসাবাদ সমর্থন করতেন না।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতির কথা ভেবে অনেকের মাথায় ককটেল বা ঘরে বসে বানানো বোমা প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্ন কাজ করছে, তাই কিছু কথা বলা জরুরি মনে করছি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিহাস বিচার করলে প্রত্যেক দেশের গণআন্দোলন গণ সংগ্রামের একটা নিজস্বতা বা ভিন্নতা থাকে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পক্ষাবলম্বনকারী কয়েকটি গণমাধ্যমের কারনে এ বিষয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মলোটভ ককটেল বা ঘরে বসে বানানো বোমা ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য ধোঁয়া আর শব্দ সৃষ্টি করে পুলিশের সরাসরি গুলীর বিরুদ্ধে পুলিশকে ভয় দেখিয়ে কিছুক্ষণ নিবৃত্ত রাখা। বাংলাদেশের গণআন্দোলন, গণআন্দোলনের সংস্কৃতির মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বাকশালী শাসনামলে জনগণ বাধ্য হয়ে এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছিল। সেটা জিয়ার আমলেও চলেছে। এরশাদ যখন বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের দেখামাত্রই গুলী করবার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারপর থেকে বাংলাদেশের গণআন্দোলন গণসংগ্রামে মলোটভ ককটেল ও ঘরে তৈরি বোমা অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে মোকাবিলার একমাত্র পথ হচ্ছে কথা বলা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশে নিশ্চিত করা। কিন্তু কিছু গণমাধ্যম ক্ষমতাসীনদের হত্যাযজ্ঞের কোন সমালোচনা না করে ক্রমাগত গণআন্দোলন গণসংগ্রামকে ‘তা-ব’, ‘সহিংসতা’, ’সন্ত্রাস’ ইত্যাদি নানান ট্যাগ দিয়ে যাচ্ছে।
জেনস সেন্টারের শীর্ষ দশ সংগঠনের যে তালিকা বানিয়েছে, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ওর মধ্যে একমাত্র ইসলামী ছাত্রশিবিরই সামাজিক গণসংগঠন। ইসলামী ছাত্রশিবির হাসিনার রাষ্ট্রের বিবেচনায় নিষিদ্ধ সংগঠনও নয়। গত একবছরের আন্দোলনে এই সংগঠনের কোন ফায়ার আর্মসের ব্যবহারের উদাহরণ আমরা দেখিনি। যদিও ককটেলের ব্যবহার হতে দেখা গিয়েছে। আইনী গণআন্দোলনের ফরম্যাটের মধ্যে তারা বরাবরই নিজেদের রাখার চেষ্টা করেছে, ফলে অকাতরে অনেক প্রাণ ঝরেও গিয়েছে।। তুলনায় বাকি নয়টা সংগঠন ফায়ার আর্মস ব্যবহারভিত্তিক সংগঠন। সুবীর ভৌমিকের ভাষায় “গাড়িবোমা” বাংলাদেশের রাজনৈতিক তৎপরতার প্রবণতা এখনও নয়। কিন্তু এরপরেও কোন বিবেচনায় ইসলামী ছাত্রশিবির ওই নয় সংগঠনের সাথে তালিকায় উঠল এবং তিন নম্বরে তাকে জায়গা দেয়া হলো তা সত্যিই বিস্ময়কর। জেনস সেন্টার এই রিপোর্ট কি খোদ জেনস প্রতিষ্ঠানের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না!
৬. জেনসের গ্রাহক বা ভোক্তারা: জেনস ১৯৫৯ সালে চালু হয়েছিল মূলত একটা ক্যাটালগ তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সেটা মাইক্রোফিল্ম টেকনোলজি আসার যুগ। ফলে তথ্যের মাইক্রোফিল্মিং ডকুমেন্টেশন আর যার অনুষঙ্গ হলো ক্যাটালগিং। এখান থেকে কালক্রমে কোন দেশের সামরিক সম্ভার বাড়ানোর অভিমুখ কোনদিকে, নতুন কি কিনছে, নীতি কি, নীতির বদল কোনদিকে Ñ এসব তথ্যের স্বাধীন উৎস হবার দিকে মনোযোগ দেয় এই সংগঠন। সবার বেলায় যেটা ঘটে Ñ শেষবিচারে গ্রাহক চাহিদাই ঠিক করে দেয় দোকানটা কেমন হবে, কি পাওয়া যাবে বা কি বেঁচবে। জেনসের মূল গ্রাহক হলো ছোট - বড় বিভিন্ন দেশের ইনটেলিজেন্স সংস্থা। বুঝা যায় ব্যাপারটা আবার এমনও নয় যে, তাদের সবার তথ্যের একক উৎস সে।
ইনটেলিজেন্স বা মিলিটারি স্ট্রাটেজিক তথ্য নানান উৎস থেকে সংগ্রহ করে ক্রসচেক করে যতটা সম্ভব সঠিক করে নেবার একটা দরকার থাকে। সে বিবেচনায় জেনস একমাত্র না, একটা উৎস। এখন খোদ জেনসের খবর যদি বায়াসড বা কান্নি মারা হয়, কোন দেশের ইনটেলিজেন্সের অর্থ পরামর্শের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয় Ñ পোলাপানি আনপ্রফেশনল রিপোর্ট তৈরি করে Ñ তার পরিণতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে জেনসকে তা আমলে নিতে হবে। জেনস নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ নিবন্ধিত একটা কোম্পানি। তাই শেয়ারের দাম পড়তে সময় বেশি লাগবে না। তবে এটা পরিষ্কার যে, এই রিপোর্ট জেনসের ব্যবসা খারাপ যাবার লক্ষণ।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছেলেখেলা করার বিষয় নয়। এটা নিয়ে হৈ হল্লা বড় করে বলার বেকুবির সুযোগ নাই, আবার নাই খাটো করারও। কিন্তু গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে সরকার সে কাজটাই করছে। গত ২০০১ সাল থেকে দুনিয়াজুড়ে সব দেশেই আল কায়েদা ফেনোমেনা দেখা দিয়েছে বা এর প্রভাব পড়েছে, একটা পটভূমি তৈরি হয়েছে। পশ্চিমের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর কাছে বিষয়টা অতিমাত্রায় সেনসেটিভ হয়ে ওঠেছে। ‘সন্ত্রাস’ বা ‘টেররিজম’ নামে শব্দ দিয়ে তা ধরার ও ব্যাখ্যা করার চল শুরু হয়ে তা এমন অবস্থা হয়েছে যে শুধু ‘টেররিজম’ শব্দটা ব্যবহার করে কেউ কেউ আলকায়েদা ফেনোমেনা বা এর তৎপরতাকে বুঝাচ্ছে। আমেরিকাসহ পশ্চিমাদেশগুলোর অভ্যন্তরীণ আইন ও কাঠামো বদলিয়ে কঠোর করা হয়েছে, নিরাপত্তা ধারণাটাই বাস্তব চর্চায় নতুন করে সাজানো হয়েছে। সেই সূত্রে আমাদের মতো দেশগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে। রাষ্ট্রের কাঠামো, আইনেও পরিবর্তন ঘটেছে।
গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম লেনদেনের ফলে দুনিয়াব্যাপী রাষ্ট্রগুলোকে আগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি পস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ। একে অন্যের উপর কারও চাওয়া না চাওয়ার ওপর নির্ভর না থেকে নৈর্ব্যক্তিক কারণেও আরও গভীর সম্পর্কে জড়িত হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর তৈরি ও অনুভূত সমস্যা ও সংকট আমাদের নয় বলে তাদ্র আধিপত্যের বলয় ও কর্মকা-ের পরিণতি থেকে বাইরে থাকার সুযোগ সীমিত হচ্ছে। আলকায়েদা বাঘ আসছে বলে একটা ভয়ের যুগ শুরু হয়েছে। ভয়টা মূলত পশ্চিমের হলেও সম্পর্ক সূত্রে আমাদের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীনরা তা হামেশাই ব্যবহার করছে। আর শ্রেণি হিসেবে যত গভীর স্বার্থে যে সকল শ্রেণি পশ্চিমের সাথে সম্পর্কিত তাদের ভয়টাই তত বেশি। এ কারণে শহুরে মধ্যবিত্তের মধ্যে আল কায়েদা ভীতি ভালই কাজ করে। ক্ষমতাসীনরা এই ভীতিটাই কাজে লাগায়।
আলকায়েদা ফেনোমেনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নতুন বিষয়টা হলো, ‘বাঘ আসতে পারে’ এই ভয়কে বিক্রি করে নিজের সংকীর্ণ লাভ হাসিল করার সুযোগ হিসেবে একে কাজে লাগানোর প্রাণপণ চেষ্টা। হাসিনার গত পাঁচ বছরের সরকার এটাই করে এসেছে, যদিও তার ইচ্ছাটা পিছনের আরও পাঁচ বছরের পুরনো। আর গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য শেখ হাসিনা আরও মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। তাঁর ফর্মুলাটা সোজা। নিজ রাজনৈতিক নীতির বিরোধীদের দমনের জন্য গুম খুন হত্যা টর্চার ইত্যাদির অত্যাচার নিপীড়ন চালানোটাকে ‘জঙ্গি বা সন্ত্রাস’ দমন বলে চালিয়ে দেয়া।
কাকে টেররিজম বলবো এর কোন সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত নির্ধারিত নাই। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো অথবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সভায় যেখানে পাশ্চাত্য শক্তিই অধিপতি Ñ তারা যেসব গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের তৎপরতাকে সন্ত্রাসবাদী বলে মনে করবেন, একমত হবেন, তালিকায় তুলবেন, তারাই সন্ত্রাসী, তাদের তৎপরতাই সন্ত্রাসবাদ। তবু, এখন যদি ধরেও নেই কথিত এই টেররিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করা রাষ্ট্রের বা তার জনগণের নিরাপত্তার জন্য জরুরি এরপরও ‘বাঘ আসার ভয় বিক্রি করা’ Ñ এটা কোনভাবেই রাষ্ট্রের বা তার জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ই নয়, ফলে জরুরি হবার তো প্রশ্নই আসে না।
শেখ হাসিনা আর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আর আমলারা বাংলাদেশে ক্রম গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে জোর করে ধরে রাখার জন্য ‘বাঘ আসার ভয় বিক্রি করার’ রাজনীতি করে চলেছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে এ ধরনের ভয় বিক্রি করার খেলা আসলে অপরাধ। আর তার চেয়েও মারাত্মক হলো, এটা আত্মঘাতী। এতে কেউ ক্ষমতার স্বাদ নেয়, তার রাষ্ট্রের নগদ স্বার্থ লাভ ঘটে। কিন্তু কিছু রাষ্ট্র ও জনগণ হেরে যায়। ঠিক যেমন ২০০৮ সালে হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছিলেন। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনগণ হেরে গিয়েছিল। এই মারাত্মক বিপদের মধ্যে আমরা সকলে আছি। একটি অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের যে ভাবমূর্তি সেখানে দিল্লীর স্থানীয় বরকন্দাজ হওয়া রীতিমতো অপমানজনক। এই কলঙ্ক আওয়ামী লীগের পক্ষে ঘোচানো কঠিন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী প্রমাণ করে এই কলঙ্ক ঘোচানো যাবে বলে মনে হয় না। এই প্রচার আগে কাজ করেছে। এখন করবে বলে মনে হয় না।
লেখক: গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক, ১ মার্চ ২০১৪।
(প্রকাশিত মত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে  rtnn.net’র সম্পাদকীয় অবস্থানের কোনো মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। লেখকের বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে ৎঃহহ.হবঃ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।) সুত্রঃ সংগ্রাম

প্রকৃত সত্যঃ লাল রড নাকি রক্তাক্ত রড 


সব জায়গায় বড় করে বলা হচ্ছে শিবিরের নিহত হাবিব নাকি নিরপরাধ।নিচের ছবি দেখুন।রক্তাক্ত রড হাতে কার দিকে ছুটে যাচ্ছে হাবিব?????

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শিবিরের নৃশংসতা

সুত্রঃ আমার ব্লগ 

-----------------------------------------------------------------

ডুয়েটে ছাত্রলীগ নেতার উপর ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসী হামলা

Photo-0026
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,গাজীপুর ( ডুয়েট ) ক্যাম্পাসে গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈকত বড়ুয়ার উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসীরা । সন্ধ্যার পর সৈকত বড়ুয়া মোবাইলে কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামের সামনে আসলে অন্ধকারের মাঝে পিছন থেকে অতর্কিতভাবে হামলা করে ছাত্রশিবির কর্মী মিরাজ । ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে যখম করা হয় ছাত্রলীগ নেতা সৈকত বড়ুয়াকে । 
হামলা করাকালীন সময়ে সাধারণ ছাত্ররা তা দেখে ফেলে ধাওয়া করে হামলাকারীকে, ধাওয়া করতে করতে ভিসি স্যারের বাসভবনের সামনের গেটের গিয়ে আটক করে হামলাকারী শিবির কর্মীকে । আটকের পর হামলাকারীকে মারধরের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. আবুল কাশেম ছুটে এসে ‘ছাত্র নামধারী ঐ সন্ত্রাসী শিবির কর্মী’কে উদ্ধার করে প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে আঁটকে রাখে । সুত্রঃ ডুয়েট ডেইলি নিউজ 
---------------------------------------------------------------------------------------------

শিবিরের ককটেল সন্ত্রাসঃ শিকার সব শ্রেণির মানুষ

ctg-pic-6











নগরীতে অহেতুক ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেই চলেছে জামায়াত ইসলামীর সহযোগী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। বিভিন্ন ইস্যুতে ক্যাডারভিত্তিক এই সংগঠনটি প্রতিবাদের নামে একের পর এক ককটেল সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিকেও তোয়াক্কা করছে না তারা। গত ছয় মাসে সংগঠনটির ককটেল সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। পথচারী, গাড়ি চালক, ব্যবসায়ী, স্কুলছাত্র, শিক্ষিকা কেউ বাদ নেই। পুলিশও কোনোভাবেই তাদের এই ত্রাস বন্ধ করতে পারছে না।

গতকাল সকাল ১০টা ৫০ মিনিট। নগরীর কাজীর দেউড়ি কাঁচা বাজারের সামনে আশপাশের এলাকা থেকে দু’জন-তিনজন করে শিবির কর্মীরা জড়ো হয়। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ১১টায় সেখান থেকে তারা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির লেখা ব্যানার সহকারে ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করে। মিছিলটি আনুমানিক ৫০ গজ অতিক্রম করে। খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম কাজীর দেউড়ি মোড়ে আসে। পুলিশ আসার খবর জানতে পেরে আসকার দীঘির পাড় এলাকায় লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে হঠাৎ থেমে যায় মিছিল। এ সময় শিবির কর্মীরা পরপর চারটি ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটায়। এরপর মুহুর্তের মধ্যে তারা পালিয়ে যায়।

গতকাল মঙ্গলবার নগরীর কোতোয়ালী থানার কাজীর দেউড়ি কাঁচা বাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে এভাবেই ত্রাস সৃষ্টি করে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। ‘চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাস এবং আবাসিক মেস থেকে নিরপরাধ ছাত্রদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে’ চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) ছাত্রশিবির গতকাল থানায় থানায় ঝটিকা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ককটেল বিষ্ফোরণের সময় আসকার দীঘির পশ্চিম পাড়ের এস এস খালেদ রোড ও এর আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। স্কুল ফেরত সন্তানদের নিয়ে তাদের অভিভাবকরা বিশেষ করে নারীরা ছুটোছুটি করতে থাকেন। অনেকে দোকানের ভেতর, আশপাশের ভবনের গেটে আবার কেউ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভেতর আশ্রয় নেন।

এভাবে একই সময়ে সড়কে আরও চারটি ককটেল ছুঁড়ে মারে শিবির কর্মীরা। এর মধ্যে তিনটি ককটেল বিষ্ফোরিত হয়। একটি ককটেল রাস্তায় পড়ে থাকে। কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে পুলিশ আসতে আসতেই শিবিরকর্মীরা মুহুর্তের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম উদ্দিন সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা তখন কাজীর দেউড়ি মোড়ে। এ সময় শিবিরের মিছিলটি লোক প্রশাসন কেন্দ্র হয়ে এস এস খালেদ রোডের গোল চত্বরের দিকে যাচ্ছিল। মিছিল থেকে হয়তো তারা আমাদের লক্ষ্য করেছিল। কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে আমরা সামনে একটু অগ্রসর হতেই ককটেল বিষ্ফোরণের শব্দ শুনি। ঘটনাস্থলে আমরা পৌঁছার আগেই তারা বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়। তবে অবিষ্ফোরিত অবস্থায় আমরা একটি ককটেল উদ্ধার করি।’

এর আগেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ইস্যুতে ঝটিকা মিছিল বের করে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এই সংগঠনটি। বিশেষ করে হরতালের সময় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বেপরোয়াভাবে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায় শিবির কর্মীরা। এর আগেও গত ২৮ জুন আসকার দিঘীর পশ্চিম পাড়ে এস এস খালেদ রোড গোল চত্বরে একটি ঝটিকা মিছিল থেকে শিবির কর্মীরা সড়ক দিয়ে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা লক্ষ্য করে ককটেল ছুঁড়ে মারে। এতে ককটেলের স্প্লিন্টারে মো. জামশেদ নামের একজন নিরীহ অটোরিকশা চালক আহত হন।

গত ছয়মাসে ছাত্রশিবিরের ককটেল সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। পথচারী, গাড়ি চালক, ব্যবসায়ী, স্কুল ছাত্র, শিক্ষিকা কেউ বাদ যায় নি। একের পর এক ককটেল সন্ত্রাসে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও শিবিরের ককটেল সন্ত্রাস থেমে নেই।

গত ২৮ মার্চ নগরীর মোমিন রোডের হেমসেন লেইনের মুখে শিবির কর্মীদের ককটেল বিষ্ফোরণে অন্তু বড়ুয়া (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী গুরুতর আহত হয়েছিল। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গত ১৪ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকায় প্রীতি দাশ (৪৫) নামের এক স্কুল শিক্ষিকা কর্মস্থলে যাওয়ার পথে শিবির কর্মীদের ছোঁড়া ককটেলের বিষ্ফোরণে গুরুতর আহত হন। তারপর গত ১৫ জুলাই নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। মিছিল থেকে কয়েকটি ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় মো. জামাল উদ্দিন (২৮) নামের এক পথচারী গুরুতর আহত হন।

গত ১৬ আগস্ট নগরীর খুলশী থানার এক্স-ইএন কলোনিতে ককটেল বানানোর সময় মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ওরফে বোমা মানিক নামে এক সন্ত্রাসী গুরুতর আহত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই বোমা মানিক ককটেল বানিয়ে শুধু শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের কাছে সরবরাহ করত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)-এর কাউন্সিলর ও জামায়াত নেতা মাহফুজুল আলম চৌধুরী এই বোমা বানানোর কাজ তদারকি করতেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

এ ব্যাপারে জানতে নগর ছাত্রশিবিরের (উত্তর) সভাপতি মশরুর হোসাইনের মোবাইলে গতকাল একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা যদি ককটেল না ফাটাই তাহলে তো সেটা পত্রিকায় আসবে না। আমরা কোনো কর্মসূচি পালন করলে সেটা পত্রিকায় আসে না। আমাদের খবর মিডিয়ায় আসার জন্য আমরা তাই কর্মসূচিতে দুই একটা ককটেল ফাটিয়ে সহিংসতা করি।’
---------------------------------------------------------------------------------------------

ছাত্রশিবিরের দেশব্যাপী হরতাল চলছে; পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আটক

ছাত্রশিবিরের দেশব্যাপী হরতাল চলছে; পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আটক
৩ জুলাই (রেডিও তেহরান): ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ আটক নেতাদের মুক্তি এবং ‘নিখোঁজ’ নেতাদের সন্ধানের দাবিতে সংগঠনটির ডাকা দেশব্যাপী সকাল সন্ধ্যা হরতাল চলছে। আজ (বুধবার) ভোর ৬টা থেকে হরতাল শুরু হয়।

এখন পর্যন্ত হরতালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে হরতাল শুরুর আগে খুব ভোরে রাজধানীর আজিমপুরে একটি গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটানা ঘটেছে।

হরতালের সমর্থনে নিউমার্কেট এলাকায় ইডেন মহিলা কলেজের সামনে মিছিল বের করে ছাত্রশিবিরের নেতা কর্মিরা।

ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর শাহজাদপুরে একটি ঝটিকা মিছিল বের করে শিবির কর্মীরা।

এদিকে, রামপুরার বনশ্রীতে শিবির ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সকাল ৭টার দিকে রামপুরার বনশ্রীতে হরতালের সমর্থনে শিবিরকর্মীরা  মিছিলের প্রস্তুতি নিলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হালকা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুই শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

---------------------------------------------------------------------------------------------

নেতা আটকের প্রতিবাদে পাটগ্রামে ছাত্রদল-শিবিরের ভাংচুর

ডেস্ক রিপোর্ট
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম ও শিবির কর্মী মোস্তাকিনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল-শিবির নেতাকর্মীরা। 

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম এবং ছাত্রশিবির কর্মী মোস্তাকিন হোসেনকে গ্রেফতার করায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা ৪টি দোকান ও একটি বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। এছাড়া একই দলের নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কয়েকশ’ নারী সরকারেরহাট-পাটগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। 

উপজেলার কাফিরহাট ঘোষপাড়া গ্রাম থেকে পুলিশ আগের হরতালের মামলায় গতকাল ভোরে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম এবং ছাত্রশিবির কর্মী মোস্তাকিন হোসেনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ সমর্থক জামির হোসেন, শুভাষ ঘোষ, নিমাই চন্দ্র ঘোষ, শুকুমার চন্দ্র ঘোষের দোকান ভাংচুর করে এবং রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ধনজিদ কুমার ও তাপস ঘোষের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর করে। 




হরতালে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাস সহিংসতা গুলিতে নিহত ২৮ আহত ৩৫০

নিউজডেস্ক, বাংলাদেশনিউজ২৪
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি ও ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে জামায়াতের ডাকা টানা ৪৮ ঘন্টার হরতালের প্রথম দিন শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাস সহিংসতা ও পুলিশের গুলিতে ২৫ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ঝিনাইদহে পিকেটারদের হামলায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। গাজীপুরে ট্রাক চাপায় নিহত হয়েছে এক পিকেটার। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছে প্রায় ৩৫০ জনেরও বেশী। নিহতদের মধ্যে বগুড়ায় ১২ জন, রাজশাহীতে এক শিশুসহ ৬ জন, জয়পুরহাটে ৬ জন, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ১ জন ও সাতক্ষিরায় ২ জন।
হরতালে পিকেটিারদের গাড়ী ভাংচুর, আগুন দেয়া, রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টিতে পুলিশ বাধা দিলে জামায়াত শিবির নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়, গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জামায়াত শিবিরের পক্ষ থেকেও গুলি করা হয়। এছাড়ো, হিন্দু, আওয়ামী লীগ ও বাম রাজনীতির নেতাদের উপর জামায়াত শিবিরের হামলা, তাদের বাড়ীঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কারণেও দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত শিবির নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কোথাও কোথাও গুলি চালাতে বাধ্য হয়। ফলে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বগুড়া শহর, শাজাহানপুর, মোকামতলা ও দুপচাচিয়া, রাজশাহীর গোদাগাড়ি, ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ড ও জয়পুরহাট সদর, সাতক্ষীরায় তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াত-শিবিরনেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৮জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি, যার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেনকমপক্ষে ৩৭ জন।
জামায়াতে ইসলামীর ডাকা দু’ দিনব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালে প্রথমদিন এসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও সহিংসতার খবর আসছে, বাড়ছে নিহত-আহত হওয়ার সংখ্যা।
:: রাজধানী ঢাকা
মঝে মাঝে ঝটিকা মিছিল ও বিক্ষিপ্ত বোমাবাজির মধ্যদিয়ে রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর লাগাতার দুই দিনের হরতাল চলছে। রোববার সকাল থেকেই নগরীতে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ি, মালিবাগ, শান্তিনগর, রামপুরা, পল্টন, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মহাখালী, বাড্ডাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
সকাল থেকে রাস্তায় রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করলেও বাস চলাচল তুলনামূলকভাবে কম। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সকালে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
গত কয়েকদিনে রেলপথে জামায়াতের নাশকতার চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে রেলের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। লাইনের ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ‘লাইন পাহারা’ বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিটি গাড়িতে রেল পুলিশের সংখ্যা ১২ জন থেকে বাড়িয়ে ১৫ জন করা হয়েছে। সকালে কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সব ট্রেনই সময়মতো ছেড়ে গেছে।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর গত বৃহস্পতিবার সারাদেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার জামায়াতের সহিংসতার সময় গুলিতে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারও সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
রোববার হরতালের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায় হরতালকারীরা। পরে তাদের পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পৌনে ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগ এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় হরতালকারীরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকালে আজিমপুর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মিরপুর-১ এলাকাতেও হরতালের সমর্থনে জামায়াত কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করে। এছাড়া লক্ষ্মীবাজার, বাড্ডা ও মিরপুরে হাতবোমা বিস্ফোরণেরও শব্দ শোনা গেছে।
:: বগুড়া
টানা তিন দিনের হরতালের প্রথম দিনে রোববার সকালে বগুড়ায় বিএনপি সমর্থিত জামায়াত শিবির কর্মী, সমর্থক ও ক্যাডারদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই মহিলাসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষনিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। শাজাহানপুরে জামায়াত শিবির থানায় আক্রমণ করার হচেষ্টা করলে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্থ্রণে দুই প্লাটুন সেনা মোতায়েন করা হয়ে। জামায়াত শিবিরের হামলার মুখে থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সেনাবাহিনী।
ফজরের নামাজের পর জামায়াত-শিবির কর্মীরা লাঠি সোটা নিয়ে মিছিল বের করে। তারা শহরের থানা রোড, ইয়াকুবিয়া মোড়, বড় গোলা, তিন মাথা, শাকপালা, মাটিডালি এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক ধ্বংস চালায়। বগুড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মমতাজউদ্দিনের বাড়ী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, দোকান এবং ব্যাক্তিগত কার্যালয় ভাংচুর ও লুটপাট করার পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারা বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের বাড়ি ও প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ খানের বাড়িতেও হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
তারা শহরে অবস্থিত এসএ পরিবহনের অফিস, করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিস অফিস ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায়ে তারা ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা চালায়।
দুপচাচিঁয়ায় সিপিবি সভাপতি ও এক আওয়ামীলীগ নেতার বাড়ী ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করার পর আগুন দিয়ে সম্ফূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে বগুড়া শহরে পাঁচজন, শাহজাহানপুরে দুই মহিলাসহ তিনজন এবং শিবগঞ্জের মোকামতলায় দুইজন নিহত হন। বগুড় শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। হরতালে জামায়াত শিবির পিকেটার ও বিএনপি কর্মীরা কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় ও রেল স্টেশনসহ কয়েকটি ভবনে অগ্নিসংযো করে পুড়িয়ে দিয়েছে। জামায়াত শিবির ও বিএনপি পিকেটাররা বগুড় নন্দীগ্রামের উপজেলা কমপ্লেক্সটি সম্ফূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়েছে।
বগুড়ার শাজাহানপুর ও সদর এলাকায় রোববার সকাল থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বিভিন্ন অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা চালায়। সকালে বগুড়ার শাজাহানপুর সেনানিবাস এলাকায়পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জামায়াত। পরে তারা শাজাহানপুর থানায়হামলা চালাতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশু ও নারীসহ ৪ জননিহত হয়। আহত হয় ৩ জন। সকাল সাড়ে ৭টায় হতাহতের ঘটনার পর ক্যান্টেনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত এ থানায় সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি অবস্থান নেয়। পরে বগুড়া পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করাহয়।
এরপর মোকামতলা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। এ ঘটনায় পুলিশেরসঙ্গে সংঘর্ষে এক শিশুসহ ৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় ২০-২৫ জন আহত হয়। এছাড়া বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৪ জন।
:: রাজশাহী
রাজশাহী গোদাগাড়িতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষে ১ শিশুসহ ৬ জন নিহত হয়েছে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয় আরও ১৫ জন হরতাল সমর্থক পেকটার ও দাঙ্গাকারী। নিহত দু’জন হলেন রফিকুল (১৩) এবং মুজাহিদ (৫০)। অন্যান্যদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
রোববার সকালে হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে ৪ জন নিহত ও ৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের মধ্যে আরো ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে পুলিশ জানায়। এরপর  জামায়াত- শিবির মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দিল জামায়াত শিবিরের কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়। জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীদের দলে দলে হামলায় সংঘর্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সকাল ১০টায় হরতালের সমর্থনে জামায়াত নেতাকর্মীরা আবার রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়।  এসময় জামায়াত- শিবির নেতা কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
:: জয়পুরহাট
জয়পুরহাটে রাস্তা অবরোধ করে হরতালের পিকেটিং করার সময় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৪ নিহত হয়েছে ও আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচবিবিতেও সকাল থেকে সংঘর্ষ চলেছে। পাঁচবিবি উপজেলায় জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা হঠাৎ পুলিশের উপর চড়াও হলে সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে আরও ২ জন। রোববার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে বিজিবি গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে গোটা শহর জুড়ে আতংক বিরাজ করছে। এঘটনার পর জয়পুরহাট ও পাঁচবিবিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
জেলা সদরের হিচমিতে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাছির উদ্দিন (১৮) নামে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন। নাছির পাঁচবিবির বাশপুরের বাসিন্দা। এ সময় আরও ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এছাড়া জেলার পাঁচবিবি সদরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষেগুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহতরা হলেন, পাঁচবিবির বড়মালিক গ্রামের জামায়াত কর্মী মাও. হাসিব উদ্দিন (৫০), আয়মার ফরমান আলী(৩০), সালাইপুরের আব্দুল হাকিম (৩২) ও কাশিয়া গ্রামেরমফিজ উদ্দিনের ছেলে মহিদুল ইসলাম (৩২)।
:: গাজীপুর
গাজীপুর সদর এলাকায় পিকেটিংয়ে বাধা দিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে। এসময় শিবির নেতা কর্মীরা রোড ব্লক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করতে চেষ্টা করে। তখন শিবির নেতা আব্দুর রাজ্জাক (২৪) ছুটাছুটি করার সময় ট্রাক চাপা পড়ে নিহত হন। তিনি শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি। নিহত রাজ্জাক ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজেরবাংলা বিভাগের (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছমির উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুরের এক মেসে থেকে ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে লেখাপড়া করতেন।
:: ঝিনাইদহ
বেলা পৌনে ১২টার দিকে হরতালে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া ১০পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরও ৫০ জন। নিহত পুলিশ সদস্যের নাম ওমর ফারুক। পিকেটার-পুলিশ সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু ঘটেছে। এসময় কয়েজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
:: সাতক্ষিরা
সাতক্ষিরায় পিকেটার-পুলিশ সংঘর্ষে এক জামায়াত কর্মীসহ দুইজন নিহত হয়েছে। সকালেই জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল নিয়ে বের হয় এবং যান চলাচল বন্ধ করার জন্য ভাংচুর শুরু করে। দুপুর একটার দিকে পৌর শহরের রইচপুরে হরতালের সমর্থনে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় বিজিবির সদস্যরা এসে ব্যারিকেড তুলে দেয়ার চেষ্টা করলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাহবুবুর রহমান মারা যায়।
সাতক্ষীরা সংঘর্ষে পৌর এলাকার রইচপুরের আলহাজ মফিজউদ্দীনের ছেলে মাহবুবুর রহমান (৩২) ও সোহাগ (১৪) নামে দুই জন নিহত হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয় ১৯ জন।

No comments:

Post a Comment