কেন্দ্র থেকে ছাত্রলীগের নগর কমিটি ঘোষণা করায় পর পদবঞ্চিতরা নগরের বিভিন্ন স্পটে গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তারা বেপরোয়াভাবে প্রায় ৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তিনটি মোটরসাইকেল। এ সময় নগরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সড়ক যানবাহনশূন্য হয়ে যায়। কোথাও কোথাও আবার যানজটের সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘ ১০ বছর পর গতকাল নগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনিকে নিয়েই বিতর্ক চলছে বেশি। তিনি ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের নেতা। বঞ্চিতদের অভিযোগ, রনির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
নগর কমিটি ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়ে গতকাল বিকেলে। তখন থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ নেতারা বিভিন্নভাবে ঘোষিত কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকে। তবে সন্ধ্যায় তারা বিক্ষোভ প্রকাশ করে। এ সময় বঞ্চিতরা নগরের জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেইট, প্রেসক্লাব, চেরাগী পাহাড় মোড়, মেয়র গলির মুখসহ বিভিন্ন স্পটে তারা যানবাহন ভাঙচুর করে। নগরের জিইসি মোড় থেকে মেয়র গলি পর্যন্ত গাড়ি ভাঙচুরে মেতে উঠে এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের ওয়াসিম গ্রুপের অনুসারীরা। এ সময় জিইসি মোড়ের আনন্দ ফার্নিচারের শোরুমের সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তারা সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে এসে জড়ো হয়। সেখানে সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পুলিশ এসে তাদেরকে সড়ক অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করে। এরপরও তারা সড়ক অবরোধ করে রাখার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের তাড়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা অবস্থান নেয় গোলপাহাড় এলাকায়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা প্রবর্তক পর্যন্ত যায়। এ সময় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওয়াসিম বলেন, ‘অনেক যোগ্য ছেলেদের বাদ দিয়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই কর্মী সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ। বঞ্চিতরা তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবে। আগামীকাল (আজ) সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করা হবে। এরপর তারা প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এখন ছাত্রলীগ করার বয়স নেই। তারপরও কর্মী সমর্থকরা যেহেতু অসন্তুষ্ট তাই এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখতে হচ্ছে।
তবে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত আরিফুল ইসলাম সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছে বর্তমান ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনির সঙ্গে রয়েছে জামায়াত-শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এছাড়া সে চিহ্নিত চাঁদাবাজ। সংগঠনের জন্য যারা দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছেন, নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। ঘটেনি তৃণমূলের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিফলন। স্থানীয় নেতাদের সাথে কোনো পরামর্শ না করেই কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আমরা কেন্দ্র ঘোষিত এ কমিটি মানি না।
প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আরও অনেক নেতাকর্মীর। এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগের একটি অংশ নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি ভাঙচুর করে এবং সড়ক অবরোধ করে রাখার চেষ্টা করে। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। তাদের অবরোধ তুলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অনুরোধ করি। এক পর্যায়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে অবরোধ তুলে যানচলাচল স্বাভাবিক করে দিই।
অন্যদিকে আগ্রাবাদের বাদামতলী এলাকায় জড়ো হয় ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা। তারা সেখানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে পদপ্রাপ্তদের একটি অংশ এসে তাদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি ছিল বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এছাড়া নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থকরাও ঘোষিত কমিটির বিপক্ষে একটি মিছিল করে করে। মিছিলে তারা বর্তমান কমিটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা নেই : চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের ভাঙচুরের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কেউ মামলা দায়ের করেন নি।
পাঁচলাইশ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুর রব সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ মামলা করতে আসেনি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ আসলে আমরা মামলা নেব।’ পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার স্যার ভালো বলতে পারবেন।’
পাঁচলাইশ থানায় দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার এএসআই জানান, ‘ভাঙচুরের ঘটনায় কেউ মামলা করতে আসেনি।’
প্রসঙ্গত, গতকাল নগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নগরের জিইসি মোড়সহ আশাপাশের এলাকায় ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুর করে। কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়।
No comments:
Post a Comment