ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের অব্যাহত সন্ত্রাস, হল দখল,চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, একশ্রেণীর শিক্ষকের দলবাজিসহ নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের জীবনও এখন অসহায় এবং নাজুক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেগুলো যতোটা না শিক্ষার তার চাইতেও বেশি বাণিজ্যের। শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে। বিশ্বের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় এটি স্পষ্ট। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উন্নয়নে তেমন উদ্যোগও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শিক্ষা জীবন হচ্ছে ব্যহত।পাশাপাশি মান হচ্ছে নিু। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে। বিষয়টি দুঃচিন্তার কারণ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, মানসহ নানা বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায় ও বিভাগের শিক্ষার্থী তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে আমাদের বুধবার-এর কাছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম বলেন, দেশের খ্যাতনামা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থবিরতা আসলেই দুঃখজনক। মারামারি সহ বিভিন্ন কারনে কিছু দিন পর পর বন্ধ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিছু সংখ্যক ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীর জন্য অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ভোগান্তির শিকার। দেশের রাজনীতিবিদ - যারা মূলত এসবের মদদদাতা তারা নিশ্চিন্তে শান্তি নিদ্রা গ্রহণ করছেন। এদের অধিকাংশের সন্তানেরা বিদেশে অথবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ফলে দেশের শিক্ষা উন্নত করার চিন্তা তাদের নেই। আমাদের এখানেই পড়তে ও চাকুরি করতে হবে। তাই সরকারের কাছ থেকে সবকিছু আদায় করে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিগত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের রাত থেকেই মূলত সারাদেশে শুরু হয় ছাত্রলীগের তাণ্ডব। সংগঠনটির লাগামহীন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি,লুটপাট, আধিপত্য বিস্তার, নিয়োগ ও ভর্তিবাণিজ্য এবং নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও কর্তাব্যক্তিদের নগ্ন দলবাজির কারণে বর্তমানে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বলতে কিছু নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌসুমী জানন, শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতির ছত্রছায়ায় নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা আজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবণ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। শিক্ষকদের অপরাজনীতিতে সহায়তা করছে কতিপয় ছাত্র সংগঠনের ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের এ কথাগুলো উদাহরণ দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, বুয়েটের আন্দোলনের সময় উপাচার্য বলেছিলেন, ‘শিক্ষকরা ক্লাস না নিলে প্রয়োজনে বাইরে থেকে শিক্ষক এনে ক্লাস নেয়া হবে। উপাচার্যের এ কথার উপরে একজন বলেছিলেন যদি শিক্ষার্থীরা ক্লাস না করে তাহলে কি বাইরে থেকে শিক্ষার্থী এনে ক্লাস নেয়া হবে? বুয়েট উপাচার্যের এই দম্ভোক্তির মাধ্যমেই ফুটে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী মনোভাব। এই দৃশ্যপট অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগরে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, অথচ সরকার এদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না। সেশন জট বেড়ে যাচ্ছে। সামনে অন্ধকার ছাড়া তো কিছু দেখছি না।
ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না বলেন, সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নতি কেন হচ্ছে না সেটা সেখানকার পরিস্থিতিই দেখিয়ে দেয়। দলবাজি, কোন্দল,বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ক্যাম্পাসের পরিবেশকে এতটাই বিষাক্ত করেছে যে, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন ও বিদ্যাচর্চার ন্যূনতম সুযোগ নেই বললেই চলে। এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ও এর কারণ গোপন কিছু নয়। প্রচলিত নিয়ম-রীতি উপেক্ষা করে দলীয় বিবেচনায় সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ও প্রশাসনই এ জন্য দায়ী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে ভিসিদের একক ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। তারা একাধারে প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক প্রধান এবং সিনেট, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে সর্বেসর্বা। সবক্ষেত্রেই নির্বাচনের বিধান রেখে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালনকেও নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ভিসিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলবাজির আখড়ায় পরিণত করেছে। তিন বছরেও এসব পদে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করায় এখন ক্ষমতাসীনদের আনুগত্য রক্ষা ও সঙ্কীর্ণ স্বার্থ রক্ষার কোন্দল সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে ১৯৯০ দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বৃদ্ধি ও বিকাশ শুরু হয়। বর্তমানে ৫৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান এক রকম নয়। অনেকের দাবি, তাদের উন্নত বিশ্বের কারিকুলাম আছে। যে কারণে জবাবদিহিতার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া, পাঠদান ও পরীক্ষা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকাটা খুবই জরুরি। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পাঠদানের জন্য মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পরিচালনা পরিষদ থাকতে হবে দক্ষ ও শিক্ষিত। এ ছাড়া শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে সহশিক্ষা কার্যক্রম। এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা থাকার পরও বিভিন্ন ধরনের উৎসবসহ সহশিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করা দরকার। খেলার মাঠ, মিলনায়তন, শিক্ষার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানমুখী করে তোলে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জামান খন্দকার বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান যে সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের অধিকাংশতেই বিবিএ, এমবিএ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো রয়েছে। এবং এই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের অন্যতম উৎস হলো এই বিষয়গুলো। আমি জানি না যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা, ইতিহাস ও সংষ্কৃতি পড়ানো হয় কি না। একটা ভাড়া করা ফ্ল্যাট বাড়িতে একটা বিশ্ববিদ্যালয়, তারা বিবিএ পড়ান বাণিজ্য করার জন্য এবং এখানে যে ছাত্র-ছাত্রী আসেন তাদের উদ্দেশ্যও সওদা করার মতো। আমার কি শিখছি সেটা দেখার বিষয় নয়। ভুরি ভুরি অ্যসাইনমেন্ট এবং দ্রুত কোর্স শেষ করার মাধ্যমে তাড়াতাড়ি সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে একজন ছাত্রকে গ্র্যাজুয়েট ঘোষণা করার মাধ্যমে তাকে চাকুরির বাজারে ছেড়ে দেয়াই এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। এখানে শিক্ষা যে মনুষত্বের বিকাশ ঘটায় সেটা ঘটুক আর নাই ঘটুক। অ্যাসাইমেন্টের চাপে পিষ্ঠ এই সব শিক্ষার্থীর অনেকের মতোই এটাই নাকি শিক্ষার সবচাইতে ভাল উপায়টা আমি মনে করি না। আমি কিছু জিনিস মুখস্ত করছি সেগুলোকে খাতায় লিখছি এটাই যদি শিক্ষা হয়, তাহলে এই শিক্ষা কতো দিন থাকবে সেটাও এক বার ভেবে দেখার বিষয়। আর এ্যাসাইনমেন্টগুলো আরো ভিন্ন এখানে মুখস্ত করতে হয় না, বই থেকে কপি পেস্ট করলেই হয়। আমার মনে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বন্ধ করতে ইউজিসির উচিত কিছু সুনির্দিষ্ট সাজবেক্ট বাছাই করে দেয়া,যেগুলো অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পড়াতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম শিকদার বলেন, পড়াশোনা শেষে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক বিষয়গুলোতে অধ্যয়নের প্রবণতা লক্ষণীয়। একটা সময় পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগের পাঠ্য বিষয়গুলোর প্রতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশের বিশেষ আগ্রহ ছিল। এই দিকটি বিবেচনায় মানবিক বিভাগ সব সমযই তুলনামূলকভাবে কিছুটা অবহেলিত ছিল, বিজ্ঞান শিক্ষার পরে ছিল তার অবস্থান। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামাজিক বিজ্ঞান এবং কলা অনুষদের সীমিত সংখ্যক বিষয়ই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনীতি, আইন, ইংরেজি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সাংবাদিকতা, লোক প্রশাসন প্রভৃতি বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাহিদা বজায় রাখলেও বাংলা, ইতিহাস, দর্শনসহ কলা অনুষদের বেশির ভাগ বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হয় নিতান্ত বাধ্য হয়ে। কোনো রকমে পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো একটি বিষয়ে ভর্তি হতে পারার চিন্তাভাবনা থেকেই তারা এই বিভাগগুলোতে সুযোগ পেয়ে নিজেদের নাম লেখায়। এ কারণে কোনো রকম জানার আগ্রহ কিংবা অনুসন্ধিৎসু মানসিকতার বশবর্তী হয়ে তারা পড়ালেখা অব্যাহত রাখে না, বরং এক ধরনের হতাশা ও অনন্যোপায় মনোভাব নিয়ে তারা মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভর করে পরীক্ষাগুলোতে পাশ করে যায়। যেসব সাবজেক্টে পড়লে চাকরির বাজারে দ্রুত প্রবেশ করা যাবে সেগুলোর দিকেই তাদের আগ্রহ থাকে বেশি। শুধু তা-ই নয়, চাকরির বাজারে চাহিদা থাকা বিষয়গুলোতে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তাভাবনার উপস্থিতি লক্ষ করার মতো। কলা অনুষদের অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা সব সময় তাচ্ছিল্যসুলভ মানসিকতা বজায রাখে। তাদের কথাবার্তা এবং আচরণে চিন্তাকাঠামোর এই বিশেষ দিকটি প্রায়শই প্রতিফলিত হয়। প্রকৃত জ্ঞানার্জনের মর্ম উপলব্ধিতে প্রোথিত না হওয়াই এর মূল কারণ। প্রকৃত জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ এদেশে প্রতিষ্ঠিত থাকলে বাংলা, দর্শন, ইতিহাস সহ মানবিক বিভাগের বিষযগুলোর প্রতি নাক উঁচু ভাব দেখিয়ে যে অবহেলা প্রদর্শনের পরিস্থিতি বজায় রয়েছে, তা কখনোই সম্ভব হতো না। কিন্তু এটা মূল কারণ হলেও দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাকেও কিছুতেই অস্বীকার করা চলে না। শিক্ষা-দীক্ষার উন্নত সংস্কৃতি যেসব দেশে বিকাশ লাভ করেছে, সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো শাখাকেই এভাবে ক্ষুদ্রজ্ঞান করা হয় না। কেননা গবেষণা, অধ্যাপনা থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে বিবিধ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন অনুভব করার মতো বাস্তব পরিস্থিতি সেসব দেশে বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে, যেখানে কোনোমতে পড়ালেখার নির্দিষ্ট স্তর অতিক্রম করে চাকরি-বাকরিতে ব্যাপৃত হওয়াই মধ্যবিত্ত পরিবারের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর চিন্তার জগৎকে অধিকার করে রাখে, সেখানে ব্যক্তিবিশেষের নির্দিষ্ট আগ্রহ অথবা প্রবণতার বিষয়টি মার খেয়ে যায়।
বুয়েটের শিক্ষার্থী আমিন মাহমুদ বলেন, দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারের, তথা শাসকগোষ্ঠীর। প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, যথোপযুক্ত শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়ন, পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ ও পাঠ্যক্রম নির্ধারণ সহ এ বিষয়ে যাবতীয় দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং এর অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বর্তায়। কিন্তু এই দেশের শাসক গোষ্ঠী কখনোই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করেনি, মাথাও ঘামায়নি। বরং এর উল্টোটাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্য। শিক্ষার বন্ধ্যাত্বকরণের জন্য এককভাবে তারাই সবচেয়ে বেশি দায়ী। এর কারণ দ্বিবিধ। এই শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বিদ্যার্জন হচ্ছে অর্থোপার্জনের একটি মাধ্যম। নিজস্ব লালিত সংস্কৃতি এবং চৈতন্যের দৈন্যদশার কারণে এর বাইরে তারা শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার অন্য কোনো ইতিবাচক ও প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে চিন্তা করতে সক্ষম হয় না। কিন্তু যেহেতু অর্থোপার্জনের অধিক কার্যকর পন্থা তাদের ভালোভাবে জানা আছে এবং সেগুলো তাদের হাতের মুঠোয়, তাই শিক্ষার উন্নতির কোনো বাস্তব প্রয়োজন তাদের কাছে নেই। তারপরও এইসব বিত্তবান রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা যেসব সন্তান মেধাবী এবং পড়ালেখায় আগ্রহী হিসেবে চিহ্নিত হয় তাদেরকে উন্নততর শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ কাজে প্রভূত অর্থব্যয়ে তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। এদেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সংকট তাদের জীবনে কোনো নিকট অথবা দূরবর্তী স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করে না- যেটা করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষদের জীবনে।।
No comments:
Post a Comment