![]() | |||||||||||||||||
|
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কাছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পণবন্দী১
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের জেরে নিহত ছাত্র নোমানী নাসিম ফারুক ও সোহেল
প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আস্কারায় লাগামহীন পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। কোনভাবেই যেন আর নিয়ন্ত্রণে আসছে না এই সংগঠনটির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি, ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও ছাত্রী-শিক্ষক লাঞ্ছনার মতো ঘটনা ঘটার পরও পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ছাত্রলীগ যেন লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গত রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) আইন-শৃংখলা বাহিনীর সামনেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাবেশে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলীবর্ষণের পর অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার না হওয়ায় একদিকে যেমন ছাত্রলীগের লাগামহীনতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তেমনি এর পরের দিনে ভয়ংকর এসব চিহ্নিত বা দাগি সন্ত্রাসী ও হত্যা-ডাকাতি মামলার আসামীরা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোতে জনমনে ভয়াবহ আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের জেরে নিজ দলের তিন কর্মীসহ চার ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মামনুনুল কেরামতকে সরিয়ে ভিসি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহান। সে সময় সোবহান প্রশাসনের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা আর প্রত্যক্ষ মদদে গোটা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ছাত্রলীগ। শুরু হয় ভিন্ন মতাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন। ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা নিরীহ অসহায় শিক্ষার্থীরা।
পাঁচ বছরে চার হত্যা : শুধুমাত্র বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত পাঁচ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক চার ছাত্র নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ছাত্রশিবিরের ও তিনজন ছাত্রলীগের কর্মী। সর্বপ্রথম ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় শের-ই-বাংলা হলের ভিতরে অর্ধশতাধিক শিবিরকর্মীকে আটকে বেধড়ক মারধর করতে থকে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। আহত ওই শিবিরকর্মীদের উদ্ধার করতে গেলে তৎকালীন ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি শরীফুজ্জামান নোমানীর উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এসময় ওই হলের ভেতরই অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন তিনি। ওই ঘটনায় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকে ৮০ দিন। এর পর ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির-ছাত্রলীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এসময় পরিকল্পিতভাবে শাহ মাখদুম হলের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে এর দায় চাপায় ছাত্রশিবিরের উপর। ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যার ঘটনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মেহেরচন্ডী এলাকার শিবির নেতা এবং রাজশাহী কলেজের ছাত্র শাহীনকে ১০ ফেব্রুয়ারি চাপাইনবাগঞ্জে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকেই দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর রাবি ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রশিবির। একই বছরের ১৫ আগস্ট শোক দিবসের ইফতারির টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন স্থগিতকৃত ছাত্রলীগের সভাপতি আওয়াল কবির জয় গ্রুপের কর্মীরা মারধর ও ছুরিকাঘাতের পর শাহ মাখদুম (এসএম) হলের দ্বিতীয় তলার ছাদ থেকে দলীয় কর্মী নাসিমকে ফেলে দিলে সে মারাত্মক আহত হয়। ঘটনার দিনই আশংকাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর ঢামেক হাসপাতালে নাসিমের মৃত্যু হয়। এর পর ২০১২ সালের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মাদার বখ্শ হলের সামনে পদ্মা সেতুর চাঁদার টাকার ভাগ নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে গোলাগুলিতে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল। সোহেল তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী ছিলেন। এসব হত্যাকা-ের ঘটনার পর থানায় এক বা একাধিক মামলা এবং নাম মাত্র তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও আজ পর্যন্ত কোন হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার হয়নি। হত্যাকা-ের পরক্ষণেই অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসনের ছত্রছায়ার কারণে তাদের গ্রেফতার ও কোন রকমের শাস্তি দেয়া হয় না। ফলে পুনরায় হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটাতে উৎসাহ পায় খুনিরা। এজন্য বারবারই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডির বড় ব্যর্থতা বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকবৃন্দ।
বিভিন্ন সময় প্রকাশ্য অস্ত্রবাজি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত পাঁচ বছরে একাধিকবার প্রকাশ্য অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষ বা নিজ দলের নেতা-কর্মীদের উপর গুলি বর্ষণ করে ছাত্রলীগে অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে যার প্রমান মেলে। ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন, তৎকালীন কমিটির সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম, গণশিক্ষা তানিম, উপ-দপ্তর সম্পাদক আতিক রহমান আতিক, উপ-পাঠাগার সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতু ও কর্মী রাজীবসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে। এরপর গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়া করতে পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ ক্যাডার তানিম তাহমিদ, ফয়সাল আহমেদ রুনু, শরীফুল ইসলাম সাদ্দামসহ বেশ কয়েকজনকে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। এর পরের দিন অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর সুজনসহ তিন ছাত্রলীগ ক্যাডার অস্ত্রসহ ক্যাম্পাসের বধ্যভূমি থেকে পুলিশের হাতে ধরা পরলেও রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান রানা মতিহার থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। এরপর গত বছরের ২৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতা-কর্মীর হাতে পুলিশের সামনে অগ্নেয়াস্ত দেখা গেছে। তারা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ওই দিন গুলিও ছুঁড়িছে। যার চিত্র বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও এসেছে। সর্বশেষ গত রোববার শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি বর্ষণ করে ছাত্রলীগ ক্যাডারররা। এরা হলেন- রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু, যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহাম্মেদ সেতু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাকিম বিল্লাহ এবং বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম। এছাড়াও একাধিকবার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতে বা কোনো অনৈতিক কাজ করতে এসব অগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করেছে। পরীক্ষা কক্ষে বেঞ্চের ওপর অস্ত্র রেখে ছাত্রলীগ নেতাদের পরীক্ষা দিতেও দেখা গেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর : পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া, মুখে দাড়ি রাখা, দেখতে সাদা-সিধা আর নিয়মিত চাঁদা না দেওয়ার কারণে গত পাঁচ বছরে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীকে নির্মম নির্যাতন করে আবাসিক হল থেকে বের করে দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এসব কু-কর্মের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ প্রশাসনকে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর রাবির বঙ্গবন্ধু হলে প্রায় ৬/৭ জন শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে রাত ভর নির্যাতন করে ছাত্রলীগ। ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মাদার বখ্শ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে কাল রাত হিসাবে পরিচিত। ওই দিন শিবির ধরার নামে তালিকা করে প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করে হাত-পা ভেঙ্গে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর আগের রাতেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অন্ততপক্ষে ৬ থেকে ৭ জন সাধারণ ছাত্রকে শিবির সন্দেহে মারধর করে হল থেকে বের করে দেয় এবং কয়েকজনকে সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এছাড়াও ২০১৩ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাহ্ মখদুম হল থেকে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়। এর আগে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, কম্পিউটার চুরি, সিট বাণিজ্য, মারধর ও হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি আবাসিক হল প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে বাইরের মেসে চলে যায়।
শিক্ষক লাঞ্ছিত : চাঁদাবাজি, অবৈধ সিট দখল ও পরীক্ষার হলে বিশৃংখলার ঘটনায় বাধা দিতে গেলে ছাত্রলীগের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষসহ লাঞ্ছিত হয়েছেন ২০ জনের মত শিক্ষক। পরীক্ষার হলে বিশৃংখলা সৃষ্টি করার ঘটনায় বাধা দিলে বাংলা বিভাগের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সফিকুন নবী সামাদীকে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর চাঁদাবাজির সময় বাধাদানের ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগের উপ-গণশিক্ষা সম্পাদক এমদাদুল হক কর্তৃক ফোকলোর বিভাগের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ড. অনুপম হিরা ম-ল প্রহৃত হয়। ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের অবৈধ সিট দখলে বাধা দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ নেতা-কর্মীদের হাতে প্রহৃত হন শহীদ শামসুজ্জোহা হল প্রাধ্যক্ষ ড. মুর্ত্তুজা খালেদ ও প্রক্টর। ওই ঘটনায় শিক্ষক সমিতি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং প্রাধ্যক্ষ পরিষদ কর্মবিরতি পালন করে। ২০১২ সালের ২ অক্টোবর শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষের দিন তৎকালীন রাবি প্রক্টর প্রফেসর চৌধুরী মোঃ জাকারিয়াসহ তিনি সহকারী প্রক্টরকে মারধর করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। এছাড়াও বিভিন্ন সময় একাধিকবার ছাত্রলীগের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ।
হামলার শিকার অর্ধশতাধিক সাংবাদিক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে গত পাঁচ বছরে অন্তত পক্ষে অর্ধশতাধিক সাংবাদিক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি এক শিক্ষককে লাঞ্ছিতের ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তিন সাংবাদিক সায়েম সাবু (দৈনিক যুগান্তর), আকন্দ মোহাম্মদ জাহিদ (নিউজ টুডে) এবং আসাদুর রহমানকে (ফোকাস বাংলা) পিটিয়ে আহত করে। একই বছরের ১০ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা দৈনিক দিনকাল ও অনলাইন সংবাদ সংস্থা রেডটাইমস্ বিডি ডটকম-এর সাংবাদিক মুনছুর আলী সৈকতকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এর পর ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ক্যাম্পাসে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে পেটানোর সময় ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা চ্যানেল আই’র বিশেষ প্রতিনিধি (ঢাকা থেকে আগত) মোস্তফা মল্লি¬ক, ক্যামেরাম্যান মইন, দৈনিক আমার দেশ’র রাজশাহী ফটো সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ, প্রথম আলো’র আজহার উদ্দিন, নিউ এইজ’র সৌমিত্র মজুমদার, কালের কণ্ঠ’র নজরুল ইসলাম জুলু, সানশাইনের রুনি, জনকণ্ঠের রাবি প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, যুগান্তরের সায়েম সাবু ও দি এডিটরের আতিকুর রহমান তমাল। এসময় প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ও চ্যানেল আই প্রতিনিধির ক্যামেরা ভাংচুর করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এ মাসের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ কর্মীরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি সামসুল আরেফিন হিমেল ও বাংলা বাজার পত্রিকার শাহজাহান বিশ্বাসকে পিটিয়ে আহত করে। এর আগে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন শীর্ষনিউজ’র লুৎফর রহমান, যুগান্তরের সায়েম সাবু, ডেসটিনি’র আব্দুর রাজ্জাক সুমন, বাংলাদেশ টুডে’র আওরঙ্গজেব সোহেল, আরটিএনএন’র এস এম সাগরকে।
এরপর ১০১১ সালের ৬ এপ্রিল দৈনিক নয়া দিগন্তের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শামছুল ইসলাম কামরুল এবং দৈনিক নতুন প্রভাত ও অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডি ন্যাশনাল নিউজ’র রহিদুল ইসলাম নীরবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মো. জাকারিয়ার নেতৃত্বে সহকারী প্রক্টর ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকার দলীয় কয়েকজন শিক্ষক সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে পিটিয়ে আহত করে। এছাড়া সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আকন্দ মোহাম্মদ জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক ডেইলি সান’র প্রতিনিধি সোহেল রানা যুবলীগ কর্মী ও দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। এবছরের ১২ জুলাই ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ ওরফে ভাগ্নে মাসুদ, আসাদ, মাহাবুরসহ ৪/৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আজিবুল হক পার্থকে পিটিয়ে আহত করে। এরপর ২ আগস্ট ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন দৈনিক জনতা’র রিপোর্টার আকিব জাভেদ। এছাড়াও সৈয়দ আমীর হলে ককটেল উদ্ধারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে রাজশাহী স্থানীয় দৈনিক লালগোলাপ’র প্রতিনিধি সরদার হাসান ইলিয়াস তানিম এর উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের চিহ্নিত ক্যাডাররা। এর পর ২০১৩ সালের শেষের দিকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নিউজ করার কারণে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দৈনিক ইনকিলাবের রাবি প্রতিনিধি আজিবুল হক পার্থ, অর্থনীতি প্রতিদিনের আল-আমীন হোসেন আকাশ ও নাজিম মৃধাকে।
শতাধিক সংঘর্ষে আহত পাঁচ শতাধিক : আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত পাঁচ বছরে রাবি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ এবং প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাথে অন্তত শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশিত সংবাদ থেকে যানা যায়, ২০০৯ সালের ২৩টি, ২০১০ সালে ২৯টি, ২০১১সালে ২১টি, ২০১২ সালে ২০টি এবং ২০১৩ সালে ১০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসে আরও বেশ কয়েকটি ছোট-খাট সংঘর্ষ ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ছিনতাই-চাঁদাবাজি : বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষ বা নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সাথে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে ব্যবহৃত অস্ত্র দিয়েই ক্যাম্পাসের আবাসিক হল ও কয়েকটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে দীর্ঘ দিন ধরে ছিনতাই করে আসছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাহ্ মখ্দুম, সৈয়দ আমীর আল, মাদার বখ্শ হলসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হল থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জুবেরী মাঠ, প্যারিস রোড, পুরাতন ফোকলোর মাঠ, তুতবাগান, হবিবুর রহমান হলের মাঠসহ বেশ কয়েকটি স্পটেও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এসব ছিনতাই করে থাকে। এর আগের এক রিকশাচালক মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে আড়াইশত টাকা ছিনতাই করে ছাত্রলীগ নেতা ডেবিল। তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের পর এ চাঁদাবাজির হার কিছুটা কমেছে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন মহলের বক্তব্য : রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মু. আজহার আলী বলেন, “ প্রত্যেকটি দলের মধ্যে মুষ্টি কয়েকজন সন্ত্রাসী থাকে। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে বলে জানা তিনি। রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ন্যূনতম অভিযোগ পাওয়া যচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান তিনি। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আশরাফুল আলম ইমন বলেন, অন্যায়কারীদের আশ্রয় দিলে তারাও যে এক সময় আশ্রয়দাতাদের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারে এর প্রমাণ মিলে সম্প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার পর। তিনি মতিহারের সবুজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার শান্ত পরিবেশ ফিরে আনার জন্য ছাত্রলীগের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করার আহ্বায়ন জানান রাবি প্রশাসনের কাছে। ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরাফাত রেজা আশিক বলেন, “অস্ত্রধারী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার ব্যবস্থা নেবে? নিজেদের ছেলেদের (ছাত্রলীগ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তো প্রশাসনের নেই।” ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মিজান উদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। আমাদের দৃষ্টিতে সবাই সমান। আইন অনুুযায়ীই এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে সমাবেশ চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশ হামলা চালায়। এতে শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যা ৭টায় সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইউটিউবের ভিডিও দেখুনঃ
দৈনিক সংগ্রামঃ সুত্র১
দৈনিক সংগ্রামঃ সুত্র১
========================================================================
দৈনিক জনকন্ঠঃ দিনভর সংঘর্ষের পর রাবি বন্ধ, বিজিবি মোতায়েন
No comments:
Post a Comment