ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে প্রক্টর অফিস ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগের চাকরি বঞ্চিত ক্যাডাররা। দলীয় বিবেচনায় ৫৪টি পদের বিপরীতে ১১২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়ার পরও সন্তুষ্ট নন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান তুহিনের ইন্ধনে চাকরি বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা এই ভাংচুর চালিয়েছে বলে জানা গেছে । ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে ভাংচুর হলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বিশ্ববিদ্যাল অচল হয়ে পড়েছে। কোন বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানা গেছে।
২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দুই বিভাগের দুইজন শিক্ষকসহ আরো ৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য ৫৪টি পদের মৌখিক পরীক্ষা গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। গত শুক্রবার বিকাল ৩টায় পুলিশ প্রহরায় ভিসি বাংলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। সভা শুরু হওয়ার আধঘণ্টা আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব হোসেন খোকন ভিসি অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিনের সাথে দেখা করেন। এ সময় তারা ভিসিকে ২শ' জনের চাকরির জন্য সুপারিশ করে বলে ভিসি অফিস সূত্র জানায়। ছাত্রলীগের চাপের কারণে গত শুক্রবারে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সিন্ডিকেটের বৈঠক স্থগিত করে প্রশাসন। পরের দিন শনিবার আবারো বৈঠক বসে।
এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নিয়োগ বাণিজ্যের ভাগবাটোয়ারা নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগের বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে ক্যাম্পাসে কয়েকদফা গোলাগুলীর ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের চাপের কারণে দলীয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫৪ পদের বিপরীতে ১১২ জন কর্মকর্তা-কমচারী নিয়োগ দিয়েছে। নিয়োগে মেধার কোন মূল্যয়ন না করে ছাত্রলীগের দলীয় ক্যাডারদেরকেই একচেটিয়াভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের চাপে দলীয় ক্যাডারদের একচেটিয়া ভাবে নিয়োগ দেয়ার পরও সন্তুষ্ট নন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান তুহিনের গ্রুপ। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান তুহিনের ইন্ধনে ছাত্রলীগ ক্যাডার আশিকুর রহমান জাপান, কাশেম, হিটলার, মাহমুদ হাসান টিটোর নেতৃত্বে কয়েক জন ক্যাডার প্রক্টর অফিসে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে অফিস থেকে বের করে দিয়ে এ ভাংচুর চালায়। এতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এরপর ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং ভিসি অফিসে ঢোকার চেষ্টা করে। পুলিশি বাধায় তারা সেখান থেকে ফিরে এসে আবারো প্রশাসন ভবনের সামনে মহড়া দেয়। পরে দুপুর দুইটায় মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। এদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য সেলিম তোহার কক্ষ, সাবেক প্রক্টর মতিনুর রহমানের কক্ষ, বঙ্গবন্ধু হলের অফিস কক্ষ, পরিবহন অফিস ভাংচুরসহ বঙ্গবন্ধু পরিষদ কর্মকর্তা হাসানকে মার-ধর করারও অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন বহিরাগতদের নিয়োগ দেয়ার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের কাছ থেকে ৩-৭ লাখ টাকা করে প্রায় ৩ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, জিয়া পরিষদ, গ্রীন ফোরামসহ ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ক্যাম্পাসের নিজস্ব পরিবহন ছাড়া কোন পরিবহন ক্যাম্পাসে আসতে না পারায় কোন বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে ক্যাম্পাস কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
No comments:
Post a Comment