৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচী পালনকালে রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে বিশ্বজিত নামের এক পথচারিকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ
॥ ফারুক আহমাদ॥
ছাত্রলীগ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ ছাত্রনেতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে ছাত্র হত্যার রাজনীতি শুরু করে। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ৩৪ বছরে ছাত্রলীগের হাতে খুন হয়েছে ৬৫ জন শিক্ষার্থী। দিন দিন এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে চক্রাহারে। বর্তমান সরকার আমলের ২০০৯-২০১২ এ চার বছরেই ২৫ জন ছাত্রকে হত্যা করেছে তারা। তাছাড়া গত চারটি বছর ছিল শিক্ষাঙ্গনে সরকার সমর্থক সংগঠনটির সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, নৈরাজ্য-নৃশংসতা, দুর্নীতি-লুটপাট, হামলা-সংঘর্ষ ও অব্যবস্থাপনার সাম্রাজ্য। এমনকি তাদের অত্যাচার-লাঞ্চনা হতে শিক্ষক-সাংবাদিক কেউ রক্ষা পায়নি। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির স্লোগানকে পায়ে ঠেলে সংগঠনটি জংলী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলেছে অন্যায় আর অসৎ কার্যক্রমে। শুধু ২০১২ সালেই দেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা আর ১ হাজার ৭৮ জন শিক্ষার্থীকে আহত করে তারা।
ছাত্রলীগের হাতে ৬৫ খুন: ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ছাত্রলীগের খুনের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশে আ’লীগের তৃতীয় ও শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগ তুমুলভাবে হত্যা-সন্ত্রাসের কার্যক্রম আরম্ভ করে। এ পর্যন্ত ছাত্রলীগ ৬৫ জন মেধাবী ছাত্রকে খুন করেছে। গত ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের কার্যক্রম শুরু করে এবং বিশ্বজিৎ নামের এক হিন্দু পথচারীকে হত্যার মধ্য দিয়ে ২০১২ সাল শেষ করে। তাদের হত্যার ধারাবাহিকতা এতটাই লম্বা হয়েছে যে, তারা গত চার বছরে ২৩ জন ছাত্র এবং কয়েকজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। বর্তমান সরকারের ৪ বছরে দেশের বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের ২৩ জন মেধাবী ছাত্রকে খুন করেছে ছাত্রলীগ, এর মধ্যে ৯ জনই ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের যাত্রা শুরু করে, ৮ ফেব্র“য়ারি চবিতে দুই শিবিরকর্মী মুজাহিদ ও মাসুদকে, ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীবকে খুন করে ছাত্রলীগ। এছাড়া ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, ৮ জানুয়ারি জাবির ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়ের আহমেদকে, ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত, ৮ ফেব্র“য়ারি (ছাত্রলীগের দাবি) ফারুক হোসেন, ১১ ফেব্র“য়ারি রাবির মহিউদ্দিন, ২৮ মার্চ হারুন অর রশিদ কায়সার, ১৫ এপ্রিল আসাদুজ্জামান, ১৫ আগস্ট নাসিম এবং ১৬ জুলাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ ফেব্র“য়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ কর্মী পলাশকে খুন করে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ২১ তারিখে তেজগাঁও পলিটেকনিকে ফাও খেতে গিয়ে সংঘর্ষ বাধিয়ে রাইসুলকে ও ২০ অক্টোবর চমেকে আবিদুর রহমান নামের কর্মীদের নিজেরাই হত্যা করে। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারিতে শাবিপ্রবিতে জুবায়েরকে, ২১ তারিখে ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগকর্মী মোস্তফা কামাল শান্তকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে, ২৫ তারিখে মাগুরায় আল আমীনকে, ১২ মার্চে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ খান সজীবকে খুন করে ছাত্রলীগ। এপ্রিল ১১ তারিখে চাঁদপুরের বিল্লালকে, ২১ তারিখে ছাত্রলীগ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ করে। এতে ১ জন নিহত হয়। সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে হাবিপ্রবিতে ফাহিম মাহফুজ নামের কর্মীকে হত্যা করে। সর্বশেষ ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির দিনে ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বিশ্বজিৎকে হত্যা করে ছাত্রলীগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ছাত্রলীগের খুনের যাত্রা শুরু : ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ছাত্রলীগের খুনের যাত্রা শুরু হয়। এ পর্যন্ত ঢাবির ১৩ জন ছাত্রকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের সংগঠনের ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল রাত ১টা ২৫ মিনিটে সূর্যসেন হলের ৬৪৫ ও ৬৪৮ নম্বর কে প্রবেশ করে ৭ জন ছাত্রকে টেনে বের করে মুহসীন হলের টিভি রুমের সামনের করিডোরে দাঁড় করিয়ে এই ৭ জনকেই ব্রাশফায়ার করে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ছাত্র হত্যার সূত্রপাত ঘটায় ছাত্রলীগ। নিহত ছাত্রদের মাঝে ছিলেন নাজমুল হক কোহিনুর, মোহাম্মদ ইদ্রিস, রেজওয়ানুর রব, সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ, বশিরুদ্দিন আহমদ জিন্নাহ, আবুল হোসেন ও এবাদ খান। ১৯৯১ সালের ২০ জুনে সিট দখলসহ নিজেদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের সূত্র ধরে মুজিববাদী ছাত্রলীগ এবং জাসদ ছাত্রলীগের কর্মীদের সংঘর্ষে মাহবুবুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে মারা যান। প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ৯ জানুয়ারি, ১৯৯২ টিএসসিতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মনিরুজ্জামান বাদল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ২২ নভেম্বর ১৯৯৩ মন্টু গ্রুপের নেতা অলোক কান্তিকে বুয়েটের তিতুমীর হল গেটে হত্যা করা হয়। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪ ডাসের সংঘর্ষে কামরুল ইসলাম বুলবুল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ২০০১ সালের ১৭ আগস্টে নিজের রিভলবারের ছোড়া অথবা বন্ধুদের গুলিতে ফিরোজ আহমদ নিহত হয়। ২০১০ সালের ২ ফেব্র“য়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে খুন হন আবু বকর ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ বছরের ঝরে গেছে ২৯ টি তাজা প্রাণ: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গত ৪০ বছরে রাবিতে এ পর্যন্ত ৬২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ এসব রাজনৈতিক সহিংসতায় ঝরে গছে ২৯টি তাজা প্রাণ। এছাড়া আহত হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি। এদের মধ্যে ২৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী, ৪ জন ছাত্রদলের, ২ জন ছাত্র মৈত্রী এবং ১জন ছাত্র ইউনিয়নের। প্রাণহানির উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো: রাবির রক্তয়ী ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্র শিবিরের শাব্বির, হামিদ, আইয়ুব, জব্বার, ছাত্রলীগ জাসদসহ সকল বামপন্থীদের হামলায় নিহত হয়। ১৯৮৮ সালের ১৭ নভেম্বর আসলাম ও ১৮ নভেম্বর আসগরকে হত্যা করা হয়। ১৯৮৯ সালের ১৮ এপ্রিল রমজান মাসে রাগীব আহসান মুন্নার নেতৃত্বে হামলা করে শফিকুলকে হত্যা, ১৯৯০ সালের ২২ জুন খলিলকে, ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতে শিবিরের ২ জন নেতাসহ ৫ জনকে হত্যা করা হয়। বিনা উস্কানীতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রমৈত্রীর সন্ত্রাসীরা মোস্তাফিজ ও রবিউলকে হত্যা করে। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ শরিফুজ্জামান নোমানীকে,। একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ফারুক হোসেন নিহত হন। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে। সর্বশেষ গত ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট ইফতারির টোকেন ভাগাভাগি নিয়ে দুগ্রুপে সংঘর্ষে নাসরুলল্লাহ ওরফে নাসিম ২৩ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেকে মারা যায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৮ সালের ১৮ এপ্রিল আমিনুলকে, ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মাসুদ বিন হাবিব ও মুজাহিদুল ইসলামকে খুন করে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৯২ সালের ২৫ নভেম্বর হরিনারায়ণপুরে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর যৌথ হামলায় নিহত হন সাইফুল। ১৯৯৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আমিনুর, ১৯৯৮ সালের ২৯ অক্টোবর মহসিন ও মামুন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৯৬ সালের ১ জুলাই ছাত্রঐক্য ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অর্ধশতাধিক শিবির কর্মীকে বের করে দেয়। নিহত কবীর, দীপু বা আনন্দর অমীমাংসিত মৃত্যু অনন্তের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই নৃশংসভাবে খুন হন জুবায়ের আহমেদ।
ছাত্রলীগের সংঘর্ষ : গত চার বছরে বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে ১৮৭টি সংঘর্ষ করেছে ছাত্রলীগ। এর মধ্যে বিভিন্ন থানা ও জেলা শাখায় হয় ৪৮টি। এতে প্রতিপক্ষের ছাত্র আহত হয়েছেন ৪ হাজার ১৪৫ জন। পুলিশ, সাংবাদিক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ, ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে ও এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৯৫ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে ৫৬টি।
শুধু ২০১২ সালে ছাত্রলীগ যে সব সংঘর্ষ করেছে তা হচ্ছে, সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে তেজগাঁ পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় ২০ জন। ১১ তারিখে রাবিতে ছাত্রদলের উপর হামলায় আহত হয় ৩০ জন। আগস্ট মাসে ইবিতে চাকরি বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগ তাণ্ডব চালায়। এতে আহত হয় ৪০ জন। ৬ তারিখে জমি দখলকে কেন্দ্র করে ৬ জনকে আহত করে।
শিাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ: ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ এবং ছাত্রলীগ-প্রতিপরে মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬০টি উচ্চশিা প্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে বন্ধ হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত হয় প্রায় দুই শতাধিক সংঘর্ষ। আহত হয়েছে ৪ হাজার ১৪৫ জন। পুলিশ, সাংবাদিক, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ, ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে ও নিজেরা এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের নামে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৯৫ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর ওপর হামলা হয় ৫৬টি।
৮০ জন শিক লাঞ্ছিত-নির্যাতিত : আওয়ামী সরকারের চার বছরে বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হাতে অন্তত ৮০ জন শিক লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ঢাবির বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলে অন্তত ২০ শিক লাঞ্ছিত ও হামলার শিকার হয়েছে। লাঞ্ছনার শিকার হয়ে বেশ কয়েকটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করতে পর্যন্ত বাধ্য হন। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকদেরও লাঞ্ছিত করে চলেছে। ২০১১ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিককে পিটিয়ে আহত করে। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঞ্ছিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিককে। একই বছরের ১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাসে হামলা চালিয়ে এক শিকিাকে লাঞ্ছিত ও ১০ ছাত্রীকে আহত করে। ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দুই শিককে লাঞ্ছিত করে। তাদের হামলায় অন্তত দেড় শতাধিক সাংবাদিককে আহত ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। শতাধিক সাংবাদিক লাঞ্ছিত: ৪ বছরে ঢাবি, জবি, জাবি, চবি, রাবি, কুবি, ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন জেলা ও শহরে ছাত্রলীগের হাতে দেড় শতাধিকের বেশি সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন।
ছাত্রী উত্ত্যক্ত ও ধর্ষণ : গত ৪ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানে শতাধিক নারী ও ছাত্রী উত্ত্যক্ত, লাঞ্ছনা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বৈশাখী অনুষ্ঠান ও থার্টিফাস্ট নাইটের অনুষ্ঠানে অন্তত ২০ নারী ও ছাত্রী লাঞ্ছিত হন ছাত্রলীগের হাতে। জাহাঙ্গীরনগরে ঘটেছে ছাত্রী উত্ত্যক্তের ঘটনা। বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য এক ছাত্রলীগ কর্মী মোবাইলে ধারণ করায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল দিনে-দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর বরিশালের মুলাদীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধর্ষণ করেছে দুই বোনকে।
নেতা-নেত্রীদের অনৈতিক সর্ম্পক: বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীদের অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িত থাকার অভিযোগও ছিল গত ৪ বছরে আলোচিত ঘটনা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা এবং কয়েকটি শাখা কমিটির নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রী হল, ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। এছাড়া সংগঠনটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও ওই অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
টেন্ডার-চাঁদাবাজি : দেশের প্রায় সব বড় শিাপ্রতিষ্ঠানে ও শহরে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। চাঁদা না দেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান ও দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজধানীর শিাভবন, গণপূর্ত ভবন, খাদ্য ভবন থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নেয় ছাত্রলীগ। নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষও হয়েছে। চাঁদা দিতে দেরি বা অপরাগতা প্রকাশ করায় ঢাবি, জাবি, রামেক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন জেলা শহরের বড় বাজেটের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখা হয়। ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যে ৭০-৮০টি কলেজের উন্নয়ন অনিশ্চিত হয়ে যায়। ৬৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাগিয়ে নেয় ছাত্রলীগ।
ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য : গত ৪ বছরে বিভিন্ন মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি এবং নিয়োগ বাণিজ্য হয় রমরমা। বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মেডিক্যালে ভর্তি এবং চাকরি দেয়ার নামে শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে ছাত্রলীগ। একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। অনার্স ভর্তিতে বড় বড় অনার্স কলেজে প্রশাসনকে জিম্মি করে ছাত্রলীগ কোটার নামে হাজার হাজার ছাত্র ভর্তি করা হয়। ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য : বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্ট আমান উল্লাহ কবির বলেন, সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সফল হয়েছে কিন্তু তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-রাহাজানির কারণে তা ধ্বংস হয়ে গেছে। যেমন এক বাল্টি দুধের মধ্যে গরুর এক ফোঁটা চনা দিলে তা নষ্ট হয়ে যায় আ’লীগের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ছাত্রলীগ গত ৪টি বছর শিক্ষাঙ্গনে যে নৈরাজ্য ও নৃশংসতা প্রদর্শন করেছে তা সংজ্ঞায়িত করা যায় না। মূলত সরকারি মদদপুষ্ট ভিসিদের নিষ্ক্রীয়তার কারণও একটি হতে পারে। তারা কোনো ধরণের একশন নেয়নি ছাত্রলীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
ছাত্রনেতাদের বক্তব্য : ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো.দেলাওয়ার হোসেন বলেন,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যা, সংঘর্ষ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবিক্রিসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। তাদের অন্যায়ের কোনো বিচার করা হচ্ছে না। এতে করে ছাত্রলীগ আরো বেশি করে অসৎ কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাস গুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর কারণে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত।
সুত্রঃ সোনার বাংলা
No comments:
Post a Comment