Wednesday, March 5, 2014

কানাইঘাটে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ৫




কানাইঘাটে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীন কোন্দলের জের ধরে গত রবিবার ত্রিমুখী সংঘর্ষে পাঁচ ছাত্রলীগ ও দ্ইু ছাত্রদল কর্মী আহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উপজেলা সদর ও কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সিলেটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত শিষ্টের দমন ও দুষ্টের পালনেঃ (নেতামন্ত্রীদের প্রতিহিংসামূলক অপরিনামদর্শী ভূমিকা)

JB
শান্তির জনপদ হিসেবে শাহজালাল (রঃ) ও ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি সিলেটের সুনাম দীর্ঘকালের। এখানে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ও রাজনৈতিক মূল্যবোধ বিশেষভাবে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঐতিহ্য বিদ্যমান। কিন্তু ইদানিং ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ ও আওয়ামীলীগের কিছু নেতার অসহিষ্ণু প্রতিহিংসামূলক ও অদূরদর্শী আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এই স¤প্রীতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের মজবুত দেয়াল ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তাদের অপরিনামদর্শী নির্দেশনা ও তৎপরতার দরুণ শান্তির জনপদ সিলেটে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। লক্ষণীয় যে, স¤প্রতি নগরীসহ সিলেটে বেশ কিছু খুন, গুম, হত্যাকান্ড অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত হওয়া সত্বেও এসব জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িতরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। উদঘাটন করা হচ্ছে না এসব অপরাধের ঘটনা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠন
ATA

Tuesday, March 4, 2014

চবি মেডিকেল সেন্টারে ছাত্রলীগের হামলা ডাক্তারকে মারপিট


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ২ দফা হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গত রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। 
হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোস্তফা কামাল হোসেন, এ্যাম্বুলেন্স চালক জগির আহমেদ ও পিয়ন তাজুল ইসলাম আহত হয়েছে। এ সময় ভয়ে চিকিৎসা কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়। 
জানা যায়, ছাত্রলীগের এক অসুস্থ কর্মীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য মেডিকেল সেন্টারে এ্যাম্বুলেন্সের জন্য কয়েক দফা ফোন করা হয়। এ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে দেরি হলে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে শাহজালাল হলের সামনে গাড়ি চালক জগির আহমেদকে মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ে একদল ছাত্রলীগ কর্মী। অপর একদল কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে সেন্টারে হামলা চালায়। 
এ সময় তারা ডা. মোস্তফা কামাল হোসেনকে মারতে গেলে পিয়ন ও অন্যান্য কর্মচারীরা বাধা দেয়ায় ছাত্রলীগ কর্মীরা পিয়ন তাজুল ইসলামকে বেধড়ক মারধর করে। তারা চিকিৎসক মোস্তফা কামালকেও মারধর এবং চিকিৎসক কামরুন্নেছার কক্ষের দরজা ভাংচুর করে।

দোকান পোড়ালেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা

ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখার প্রধান ফটকে ‘বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন’ ব্যানার লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত দিকে সমবায় ব্যাংকের একটি জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে সেখানে থাকা ফুটপাতের কয়েকটি বন্ধ দোকান পুড়িয়ে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর তাঁরা সেই জমির প্রবেশ ফটকে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ব্যানার লাগিয়ে দেন।

ক্যাম্পাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখা স্থানান্তরের দাবিতে আজ মঙ্গলবার ব্যাংকটির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বেলা দুইটার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা।
এ সময় ভিক্টোরিয়া পার্কসংলগ্ন এলাকায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য ক্যাম্পাসের দিকে আসতে চাইলে তাড়া দেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা ঢাকা দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়লে শিক্ষার্থীরা তাঁদের লক্ষ্য করে সেখানেই ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় হল উদ্ধার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন। পরে শিক্ষার্থীরা ফিরে এসে আবার ঢাকা ব্যাংকের শাখায় ইট ছোড়েন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ টায়ার জ্বেলে ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় জনসন রোড অবরোধ করে রেখেছেন। এতে সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমবায় ব্যাংকের ওই জমিতে কয়েকটি চৌকির ওপর শীতের কাপড়রের ২০-২৫টি দোকান ছিল। তবে সেখানে কোনো দোকানি ছিলেন না। বেলা একটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেই জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে এসব কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে সদরঘাট ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নেভায়।
বেলা ১১টার দিকে হল উদ্ধার সংগ্রাম পরিষদ ক্যাম্পাসে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখার প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে শিক্ষক সমিতি। সেখান থেকে দুপুর ১২টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে ব্যাংকের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় ব্যাংকের ভেতরে অনেকেই আটকা পড়েন। এমনকি বাইরে থেকেও কেউ ব্যাংকে ঢুকতে পারছেন না। দুপুর ১২টার দিকে ব্যাংকের প্রধান ফটকে ‘বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন’ ব্যানার লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

Sunday, March 2, 2014

সন্ত্রাস করলেও ব্যবস্থা নেয়া হয় না : তাই ছাত্রলীগ বেপরোয়া

সন্ত্রাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পর্ক নতুন নয়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ। স্বাধীনতার পরপরই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন হিসেবে তারা যে ভূমিকা রেখেছিল তার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা প্রবীণদের খুব ভালোভাবেই মনে থাকার কথা। তারপর যখনই দল ক্ষমতায় গেছে, ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেখা গেছে।

 বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন- তারা শিক্ষাঙ্গনে-রাজপথে অস্ত্র হাতে কত রক্ত ঝরিয়েছে তার হিসাব করা কঠিন। সর্বশেষ গত রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলা, গোলাগুলির ঘটনা এখনও সারা দেশে আলোচনার প্রধান বিষয়। এ নিয়ে পুরোদমে চলছে অবিশ্বাস্য বাদানুবাদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইন রক্ষা বাহিনীর ভূমিকাও বিস্ময়কর না বলে পারা যায় না।
বাধ্য না হলে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের গায়ে কারও হাত পড়ে না, এটাই বাস-ব সত্য। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ছেলেরা কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। এক বিশ্বজিত্‌ হত্যা মামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাদ দেয়া হয়নি। তবে এ জন্য চেষ্টার কমতি ছিল না। কিন’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবারই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য অস্ত্র হাতে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়ে রক্ত ঝরাতে দেখা গেলেও কাউকে গ্রেফতার হতে দেখা যায়নি। বরং খুনের মামলার আসামি চিহ্নিত ছাত্রলীগ নেতাকে পুরস্কৃত হতে দেখা গেছে। গত রোববারও বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার সময় পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে সক্রিয় দেখা গেছে। পত্রিকা ও টিভির পর্দায় তাদের অ্যাকশনের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। অথচ আশ্চযের্র বিষয়, এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও থানায় মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয়ের প্রায় ৫০০ জনকে আসামি করায় এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে ছাত্রলীগ এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিতে আগে কমই দেখা গেছে। অন্যদিকে এই হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের করা চার মামলার কোনোটিতেই ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী কোনো নেতাকে আসামি করা হয়নি। বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে বেশ ভেবেচিনে- পরিকল্পনা মোতাবেকই পা ফেলা হচ্ছে।
তবে এর মধ্যেই গণমাধ্যমে সন্ত্রাসী ভূমিকার ছবি ছাপা হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অস্ত্রধারী সবাই যে ছাত্রলীগের নয় সেটা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন। তবে যারা ছাত্রলীগের তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা তিনি বললেও বাস-বে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা দেখা যাচ্ছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার বেশ কায়দা করে বলেছেন, তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। ফলে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মামলা হলেও এখন পর্যন- ছাত্রলীগের কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। সম্ভবত তাদের কাউকেই তারা চিনে উঠতে পারেননি! দলবাজ না হলে কোনো দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা এমন হতে পারে না। তিনি অস্ত্রধারী হামলাকারীদের আশপাশে পুলিশের থাকার কথাও অস্বীকার করেছেন। তাহলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলো কি সবই মিথ্যা?
দল ও সরকারের এমন ভূমিকার কারণেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠার দুঃসাহস পেয়েছে। তারা ক্যাম্পাসে শুধু প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপরই চড়াও হয় না, সাধারণ ছাত্র এমনকি শিক্ষকদেরও রেহাই দেয় না। নিজেদের খুঁটির জোর জানে বলেই তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করতে দ্বিধা করে না।

বাণিজ্য মেলায় ছাত্রলীগের লুটতরাজ ও সন্ত্রাস : বদরুদ্দীন উমর

 সন্ত্রাসী উচ্চারণ যাদের জিহ্বার নিত্যকর্ম তারা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করার জন্য যতই পবিত্র বাক্য বিস্তার করুক, তার দ্বারা যে কিছুই হওয়া সম্ভব নয়, এটা বাংলাদেশের এক বাস্তবতা। গত এক বছরে আওয়ামী লীগের শাসন আমলে সন্ত্রাস যেভাবে প্রায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিস্তার লাভ করছে তার দিকে তাকিয়ে এর সত্যতার প্রমাণ নতুন করে পাওয়া যায়।

ডিসেম্বর ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের সঙ্গে সঙ্গে, মুহূর্ত মাত্র দেরি না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সন্ত্রাস পুরোদমে শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ছাত্র সন্ত্রাস এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যাতে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়। তার এভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করার আগে পর্যন্ত অবশ্য আমাদের জানা ছিল না, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে তিনি ছাত্রলীগেরও সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে রাখার জন্য তাদের ছাত্র সংগঠনটির গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছিলেন। কোন রাজনৈতিক দলের সভাপতি যে নিজেদের ছাত্র সংগঠনেরও সর্বোচ্চ নেতার পদ অধিকার করে থাকতে পারেন সেটা এর আগে কোথাও দেখা যায়নি। এ ধরনের কর্ম বা অপকর্মের পরিণতি কি হয় সেটা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কর্তৃক ছাত্রলীগের উচ্চতম নেতৃত্বের পদ দখল করে রাখা থেকেই দেখা গেল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যত্র ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও তার প্রয়োজনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করলেও এটা এক মহাসত্য যে, আওয়ামী লীগের গুণাবলী ছাত্রলীগের মধ্যে সংক্রামিত হওয়ার কারণেই তাদের দ্বারা উপরোক্ত সবকিছু ২০০৮-এর ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অনেক কথাবার্তা ও তথাকথিত পদক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। নির্বাচনে বিজয় লাভের পর আওয়ামী লীগের চিহ্নিত ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যেভাবে দেশে ফেরত এসে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের কাণ্ডারি হিসেবে আবার পূর্ব ভূমিকা পালনের জন্য তৈরি হচ্ছে ও তাদের তৈরি করা হচ্ছে তাতে ছাত্ররা যে তাদের বিরুদ্ধে মূল দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনা ও হুমকিকে কোন গুরুত্ব দেবে না এবং তাকে এক ধরনের ভাঁওতাবাজি ও ভণ্ডামি মনে করেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটতরাজ ও সন্ত্রাস চালিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

‘যেখানেই জামায়াত শিবির সেখানেই প্রতিরোধ’ ঘোষণা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের

যেখানেই জামায়াত-শিবির সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। বৃহস্পতিবার পরিষদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ ঘোষণা দেন। 

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবিরের রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানেই ছাত্র শিবির বা জঙ্গী মৌলবাদী সংগঠন পাওয়া যাবে সেখানেই তাদের প্রতিরোধ করা হবে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে সারাদেশে জামায়াত-শিবির মৌলবাদবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন তাঁরা। 

নেতৃবৃন্দ বলেন, সারাদেশে ছাত্র শিবির যে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে মৌলবাদী চক্র এদেশে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অপরাজনীতি করেছিল তাদের উত্তরসূরি খুনী শিবির চক্র সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনে রগ কাটা ও মানুষ হত্যার অপরাজনীতি অব্যাহত রেখেছে। বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ শি¶ার্থীকে হত্যা ও অসংখ্য শি¶ক-ছাত্রকে আহত করা এরই প্রমাণ। শিবিরের এই অপরাজনীতি ছাত্র সমাজ কখনই মেনে নেবে না।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সভাপতি হোসাইন আহমেদ তফসিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ.এম. বদিউজ্জামান সোহাগ, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি কনক বড়ুয়া, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তানভীর রুসমত, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মেহেদি হাসান মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ।

শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-রাহাজানিঃ ছাত্রলীগের হাতে ৬৫ ছাত্র খুন


৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচী পালনকালে রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে বিশ্বজিত নামের এক পথচারিকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ
॥ ফারুক আহমাদ॥
ছাত্রলীগ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ ছাত্রনেতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে ছাত্র হত্যার রাজনীতি শুরু করে। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ৩৪ বছরে ছাত্রলীগের হাতে খুন হয়েছে ৬৫ জন শিক্ষার্থী। দিন দিন এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে চক্রাহারে। বর্তমান সরকার আমলের ২০০৯-২০১২ এ চার বছরেই ২৫ জন ছাত্রকে হত্যা করেছে তারা। তাছাড়া গত চারটি বছর ছিল শিক্ষাঙ্গনে সরকার সমর্থক সংগঠনটির সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, নৈরাজ্য-নৃশংসতা, দুর্নীতি-লুটপাট, হামলা-সংঘর্ষ ও অব্যবস্থাপনার সাম্রাজ্য। এমনকি তাদের অত্যাচার-লাঞ্চনা হতে শিক্ষক-সাংবাদিক কেউ রক্ষা পায়নি। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির স্লোগানকে পায়ে ঠেলে সংগঠনটি জংলী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলেছে অন্যায় আর অসৎ কার্যক্রমে। শুধু ২০১২ সালেই দেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা আর ১ হাজার ৭৮ জন শিক্ষার্থীকে আহত করে তারা। 

ছাত্রলীগের হাতে ৬৫ খুন: ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ছাত্রলীগের খুনের যাত্রা শুরু হয়।  বাংলাদেশে আ’লীগের তৃতীয় ও শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগ তুমুলভাবে হত্যা-সন্ত্রাসের কার্যক্রম আরম্ভ করে। এ পর্যন্ত ছাত্রলীগ ৬৫ জন মেধাবী ছাত্রকে খুন করেছে। গত ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের কার্যক্রম শুরু করে এবং বিশ্বজিৎ নামের এক হিন্দু পথচারীকে হত্যার মধ্য দিয়ে ২০১২ সাল শেষ করে। তাদের হত্যার ধারাবাহিকতা এতটাই লম্বা হয়েছে যে, তারা গত চার বছরে ২৩ জন ছাত্র এবং কয়েকজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। বর্তমান সরকারের ৪ বছরে দেশের বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের ২৩ জন মেধাবী ছাত্রকে খুন করেছে ছাত্রলীগ, এর মধ্যে ৯ জনই ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের যাত্রা শুরু করে, ৮ ফেব্র“য়ারি চবিতে দুই শিবিরকর্মী মুজাহিদ ও মাসুদকে, ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীবকে খুন করে ছাত্রলীগ। এছাড়া ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, ৮ জানুয়ারি জাবির ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়ের আহমেদকে, ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত, ৮ ফেব্র“য়ারি (ছাত্রলীগের দাবি) ফারুক হোসেন, ১১ ফেব্র“য়ারি রাবির মহিউদ্দিন, ২৮ মার্চ হারুন অর রশিদ কায়সার, ১৫ এপ্রিল আসাদুজ্জামান, ১৫ আগস্ট নাসিম এবং ১৬ জুলাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ ফেব্র“য়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ কর্মী পলাশকে খুন করে।

ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত মেধাবী ছাত্র আবুবকর সিদ্দিকের মৃত্যু



এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ছাত্র আবু বকর মারা যাওয়ার ঘটনায় গতকাল বুধবার ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে -সংগ্রাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপে সংঘর্ষে আহত ২৫ জনের মধ্যে গুরুতর আহত আবুবকর গতকাল বুধবার মারা গেছে। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেলে কর্তব্যরত ডাক্তার শফিকুল হক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।



তবে মেডিকেলের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, আবুবকর মঙ্গলবার রাতেই মারা গেয়েছিল। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশের সাথেও কিছু সময় সংঘর্ষ হয়। পরে প্রক্টর অফিস ভাংচুর করে ছাত্ররা। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা অভিযোগ করেন, আবুবকরের মৃত্যুর জন্য প্রক্টরই দায়ী। তার নির্দেশেই ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় আমাদের রুমে পুলিশকে টিয়ারসেল ছুঁড়ে মেরেছে। এদিকে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনকে দমানোর জন্য ক্যাম্পাসে ১০টি পয়েন্টে পাহারা বসিয়েছে ছাত্রলীগ। আবুবকরের লাশ দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে পাঠানো হয়েছে। তার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক।

তথ্যসন্ত্রাসঃ ছাত্রলীগের ‘আত্মরক্ষা’ ও নিষ্ক্রিয় আইন

মশিউল আলম | ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৪ 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতায় ‘যতজনের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে, তারা সবাই ছাত্রলীগের নয়’—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এই কথা বলেছেন। এর মানে দৃশ্যমান অস্ত্রধারীদের কয়েকজন ছাত্রলীগের। তাহলে ছাত্রলীগের এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের যারা, আমরা তাদের বহিষ্কার করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ বহিষ্কার মানে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার। এটা রাষ্ট্রের কোনো আইনি পদক্ষেপ নয়, সাংগঠনিক ব্যবস্থামাত্র। তাঁরা যে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন, সে বিবেচনায় এটি নিতান্তই এক লঘু পদক্ষেপ, যা লোক দেখানো বলে কেউ ধরে নিলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া আমরা জেনেছি, বহিষ্কৃত হয়েছেন সেদিনের অস্ত্রধারীদের মধ্য থেকে মাত্র দুজন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে অন্তত ছয়জন অস্ত্রধারীর ছবি ছাপা হয়েছে, যাঁরা ছাত্রলীগের নেতা। বাকি চারজনকে কেন বহিষ্কার করা হয়নি? তাঁদের বিরুদ্ধে আদৌ কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে?

ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ‘আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’—প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি তথ্য না আশ্বাস, তা আমরা জানি না। কিন্তু কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। বরং যাঁদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাঁরা কেউই ছাত্রলীগের নন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেগুলোর কোনোটিতেই ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী কোনো নেতাকে আসামি করা হয়নি। আসামি করা হয়েছে ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন প্রভৃতি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের, যাঁরা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে বর্ধিত ফি ও সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করার দাবিতে আন্দোলন করছেন।