Saturday, March 1, 2014

ইবিতে পুলিশের শটগান ছিনিয়ে ছাত্রলীগের গুলি : ছাত্রদলের মিছিলে হামলায় আহত ৬০











শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্রদলের মিছিলে গতকাল সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। নিজেদের মজুত অস্ত্র ব্যবহার ছাড়াও এ সময় ইবির ছাত্রলীগ সভাপতি এক পুলিশ সদস্যের শটগান কেড়ে নেয়। সেই অস্ত্র দিয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর চার রাউন্ড গুলি চালানো হয়। এছাড়া আরও অন্তত ৮ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের মিছিলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা হামলা চালালে ছাত্রদলও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ইবি ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৬০ নেতাকর্মী আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত ইবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সবুরে নিশান সৌরভকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স ও ১০টি গাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। 

গত ১২ জানুয়ারি শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রদল। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু করে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ শেষে সকাল ১১টার দিকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় পেছন দিক থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা মেইন গেট দিয়ে পালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গেট এবং ছাত্রলীগ মেইন গেটে অবস্থান নেয়। এ সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ফের সংগঠিত হয়ে তৃতীয় গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রশাসন ভবনের কাছে এলে আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি, রামদা, লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা আবারও ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করে। ছাত্রদল কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে প্রতিরোধ গড়ে তুললে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

সংঘর্ষের সময় পুলিশ ছাত্রদলের দিকে কেন গুলি করছে না—এমন অভিযোগে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কয়েক পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হয়। উপর্যুপরি কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ৪ পুলিশ সদস্যকে আহত করে। এ সময় ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এক পুলিশ সদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার সজিবের হাতে তুলে দেয়। ইবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব সেই অস্ত্র দিয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর চার রাউন্ড গুলি চালায়। 

সংঘর্ষের সময় অন্তত ১২ রাউন্ড গুলি ও দুটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আধাঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের যৌথ হামলার মুখে ছাত্রদল কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছু ছাত্রদল কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গেট দিয়ে পালিয়ে গেলেও তাদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় মমতাজ ভবনে আশ্রয় নেয়। সংঘর্ষের সময় প্রশাসন ভবনের পাশে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষকদের আবাসিক এলাকার মমতাজ ভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। 

সংঘর্ষের পর ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় তাদের কোয়ার্টারে আশ্রয় নিলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা সেখানেও ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরে সেখান থেকে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুকসহ ৮ নেতাকর্মীকে আটক করে। এ সময় পুলিশ তাদের পিটিয়ে আহত করেছে বলে প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কনস্টেবল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পেটের দায়ে মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার কাজ করি। অথচ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আজ আমাদেরই বেধড়ক পিটিয়ে আহত করল এবং আমাদেরই অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলি করল। এতে আমাদেরই এখন নিরাপত্তা নেই এবং চাকরি হারানোর ভয়ে এখন আমাদের বোবা কান্না কাঁদতে হচ্ছে।’
তবে ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ছাত্রদল আমাদের ওপর হামলা চালালে আমরা প্রতিহত করেছি। পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

প্রক্টর ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু বলেন, ক্যাম্পাসে মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ থাকলেও ছাত্রদল তা অমান্য করে মিছিল করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যে কোনো ধরনের হামলা ঠেকানোর জন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও তারা আমাদের অগ্রাহ্য করে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায়। এ ব্যাপারে ইবি থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। 
ক্যাম্পাসে সংঘটিত সংঘর্ষ ও পরে শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় ভাংচুর এবং পুলিশের তল্লাশির নামে হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নজিবুল হক ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ইকবাল হোসেন। বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের মিছিলে হামলার ঘটনায় প্রমাণ করে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কোনো নিরাপত্তা নেই।

No comments:

Post a Comment