সন্ত্রাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পর্ক নতুন নয়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ। স্বাধীনতার পরপরই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন হিসেবে তারা যে ভূমিকা রেখেছিল তার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা প্রবীণদের খুব ভালোভাবেই মনে থাকার কথা। তারপর যখনই দল ক্ষমতায় গেছে, ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেখা গেছে।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন- তারা শিক্ষাঙ্গনে-রাজপথে অস্ত্র হাতে কত রক্ত ঝরিয়েছে তার হিসাব করা কঠিন। সর্বশেষ গত রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলা, গোলাগুলির ঘটনা এখনও সারা দেশে আলোচনার প্রধান বিষয়। এ নিয়ে পুরোদমে চলছে অবিশ্বাস্য বাদানুবাদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইন রক্ষা বাহিনীর ভূমিকাও বিস্ময়কর না বলে পারা যায় না।
বাধ্য না হলে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের গায়ে কারও হাত পড়ে না, এটাই বাস-ব সত্য। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ছেলেরা কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। এক বিশ্বজিত্ হত্যা মামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাদ দেয়া হয়নি। তবে এ জন্য চেষ্টার কমতি ছিল না। কিন’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবারই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য অস্ত্র হাতে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়ে রক্ত ঝরাতে দেখা গেলেও কাউকে গ্রেফতার হতে দেখা যায়নি। বরং খুনের মামলার আসামি চিহ্নিত ছাত্রলীগ নেতাকে পুরস্কৃত হতে দেখা গেছে। গত রোববারও বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার সময় পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে সক্রিয় দেখা গেছে। পত্রিকা ও টিভির পর্দায় তাদের অ্যাকশনের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। অথচ আশ্চযের্র বিষয়, এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও থানায় মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয়ের প্রায় ৫০০ জনকে আসামি করায় এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে ছাত্রলীগ এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিতে আগে কমই দেখা গেছে। অন্যদিকে এই হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের করা চার মামলার কোনোটিতেই ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী কোনো নেতাকে আসামি করা হয়নি। বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে বেশ ভেবেচিনে- পরিকল্পনা মোতাবেকই পা ফেলা হচ্ছে।
তবে এর মধ্যেই গণমাধ্যমে সন্ত্রাসী ভূমিকার ছবি ছাপা হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অস্ত্রধারী সবাই যে ছাত্রলীগের নয় সেটা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন। তবে যারা ছাত্রলীগের তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা তিনি বললেও বাস-বে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা দেখা যাচ্ছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার বেশ কায়দা করে বলেছেন, তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। ফলে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মামলা হলেও এখন পর্যন- ছাত্রলীগের কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। সম্ভবত তাদের কাউকেই তারা চিনে উঠতে পারেননি! দলবাজ না হলে কোনো দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা এমন হতে পারে না। তিনি অস্ত্রধারী হামলাকারীদের আশপাশে পুলিশের থাকার কথাও অস্বীকার করেছেন। তাহলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলো কি সবই মিথ্যা?
দল ও সরকারের এমন ভূমিকার কারণেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠার দুঃসাহস পেয়েছে। তারা ক্যাম্পাসে শুধু প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপরই চড়াও হয় না, সাধারণ ছাত্র এমনকি শিক্ষকদেরও রেহাই দেয় না। নিজেদের খুঁটির জোর জানে বলেই তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করতে দ্বিধা করে না।
No comments:
Post a Comment