এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ছাত্র আবু বকর মারা যাওয়ার ঘটনায় গতকাল বুধবার ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে -সংগ্রাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপে সংঘর্ষে আহত ২৫ জনের মধ্যে গুরুতর আহত আবুবকর গতকাল বুধবার মারা গেছে। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেলে কর্তব্যরত ডাক্তার শফিকুল হক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে মেডিকেলের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, আবুবকর মঙ্গলবার রাতেই মারা গেয়েছিল। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশের সাথেও কিছু সময় সংঘর্ষ হয়। পরে প্রক্টর অফিস ভাংচুর করে ছাত্ররা। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা অভিযোগ করেন, আবুবকরের মৃত্যুর জন্য প্রক্টরই দায়ী। তার নির্দেশেই ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় আমাদের রুমে পুলিশকে টিয়ারসেল ছুঁড়ে মেরেছে। এদিকে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনকে দমানোর জন্য ক্যাম্পাসে ১০টি পয়েন্টে পাহারা বসিয়েছে ছাত্রলীগ। আবুবকরের লাশ দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে পাঠানো হয়েছে। তার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক।
গত সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে রাতভর ছাত্রলীগের দু'গ্রুপে সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে আবুবকরের অবস্থা আশংকাজনক ছিলো। ৪৬ ঘণ্টা পর গতকাল আবুবকরের মৃত্যু হয়। তার চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তার সহকর্মীরা। এজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই দায়ী করেছে। এদিকে সোমবারের ওই সংঘর্ষের পর গ্রেফতার নয় শিক্ষার্থীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ছাত্রদের বিক্ষোভ : ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবুবকর সিদ্দিক নিহত হওয়ার খবর ক্যম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা খবর শুনার সাথে সাথে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল কলা ভবন প্রদক্ষিণ শেষে মলচত্বর হয়ে ভিসির বাসভবনের সামনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার সেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। সাধারণ ছাত্ররা পুলিশের বাধার মুখে মলচত্বর জড়ো হলে ছাত্রলীগ নেতারা তাদেরকে উল্টো হুমকি দিয়ে হলে ফিরে যেতে বাধ্য করে। ছাত্রলীগ নেতাদের বাধার মুখে সেখান থেকে ছাত্ররা চলে গেলেও এর একটু পরে বেলা ১১টার দিকে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবার মিছিল বের করে। এসময় কিছু বিক্ষুব্ধ ছাত্র প্রক্টরের অফিসে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে তারা প্রক্টরের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ৪/৫টি গাড়ি ভাংচুর করে। অবস্থার অবনতি হওয়ার আশংকায় কর্তৃপক্ষ একপর্যায়ে কলা ভবনের গেটগুলো বন্ধ করে দেয়।
সাধারণ ছাত্ররা ছাড়াও আবুবকরের মৃত্যুর খবর শুনে বিক্ষোভ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। তারা দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলে মিছিল থেকে। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশও হঠাৎ করে সমাপ্ত হয়ে যায়। ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুদ্দিন কবির আতিক বলেন, আজ আমরা আর কোন আন্দোলন করতে পারছি না। আগামীকাল প্রশাসনের বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে দোসীদের শাস্তির দাবি জানানো হবে।
আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগের পাহারা : মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের প্রথম হত্যাকান্ড। বহুদিন পর ক্যাম্পাসে লাশ দেখে ছাত্ররা প্রতিবাদে ফুসে উঠলেও ছাত্রলীগ নেতাদের বাধার মুখে তারা কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি। শোক আর দুঃখের বহিঃপ্রকাশ করে আবুবকরের অনেক সহপাঠী হলে গিয়ে কেঁদেছেন নিভৃতে। দু'চারজন আবার টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন তাদের অক্ষমতার কথা । ইতিহাস বিভাগের কয়েকজন ছাত্র জানায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে পাহারা বসিয়ে হুমকি দিয়েছে। এ ছাড়াও তাদেরকে হল থেকে নামিয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। তাদেরকে ছাত্রলীগ নেতারা টিভি ক্যামেরার সামনে থেকেও ডেকে নিয়ে যান। তবে বাধা দেয়ার অভিযোগ নাকচ করে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু বলেন, আমরা ছাত্রদের বিক্ষোভে কোনো বাধা দেইনি। শুধু পরামর্শ দিয়েছি, পরিস্থিতি যেন সহিংসতার দিকে না যায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার জীবনকৃষ্ণ রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। ছাত্রলীগের নেতারাও শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করেন।
No comments:
Post a Comment