Saturday, February 15, 2014

একনজরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড১


বেশ কিছুদিন ধরে জামাত শিবিরকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষনা করে তাদের নিষিদ্ধের দাবী তোলা হচ্ছে। জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধের জন্য গণজাগরন মঞ্চ, নাগরিক ফোরামসহ জামাত-শিবির বিদ্ধেষী সকল সংগঠন থেকে রীতিমত হুংকার ছোড়া হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যেন বর্তমান বাংলাদেশে জামাত শিবিরই একমাত্র সমস্যা। তাদের নিষিদ্ধ করা গেলে দেশটা যেন সুখের স্বর্গে পরিনত হবে। আসলে কি তাই? বাংলাদেশের রাজনীতিতে কারা সন্ত্রাসী? কারা দেশে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসের পৃষ্টপোষক? কাদের রাজনীতি সন্ত্রাসনির্ভর? স্বাধীনতার পর থেকেই কাদের হাতে দেশের রাজনীতি,শিক্ষাঙ্গনসহ লালসবুজের পতাকা বারবার রক্তাক্ত হয়েছে? কাদের আদর্শ সন্ত্রাসবাদ? কারা সন্ত্রাসের পৃষ্টপোষকতা দিয়ে এ দেশটাকে সন্ত্রাসের নরকরাজ্যে পরিনত করেছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত চারবছরে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের সামান্য ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে, যাতে প্রমাণিত হবে কারা সন্ত্রাসী সংগঠন? কাদের নিষিদ্ধ করা দরকার? 

গত চারবছরে এমন কোন অপকর্ম নেই যা ছাত্রলীগ নামক এ দানবরা করেননি। বর্তমান ছাত্রলীগতো মহাজোট সরকারের ফ্রাংকেন্টাইনে পরিনত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় গত চারবছরে খুন, ধষণ, চাদাঁবাজী, মাস্তানী,ইভটিজিং এবং নানা ধরণের সন্ত্রাসী কাজের মাধ্যমে তারাই প্রমাণ করেছে যে ছাত্রলীগ আসলেই একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। শিক্ষা,শান্তি, প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি হলেও বাস্তবে সন্ত্রাস, চাদাঁবাজী আর মাস্তানী তাদের আসল মূলনীতি। তাই ছাত্রলীগকে জনসাধারণের সাথে বিশেষ করে এদেশের ছাত্রসমাজের সাথে আর প্রতারণা না করে তাদের মূলনীতিগুলো সংশোধনের আহবান জানায়।নিম্নে তাদের নব্য সন্ত্রাসবাদের আংশিক ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো: 
ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের বিগত চারবছরের আলোচিত চরিত্র ছিল ছাত্রলীগ। দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হানাহানি, টেন্ডারবাজী, খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা তারা প্রায় বিনা বাধায় ঘটিয়ে চলেছে। রাষ্ট্রক্ষমতার চারবছরে এসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস নৈরাজ্য আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশের ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ন্যায় সংগত দাবির আন্দোলনের ওপরও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের আক্রমন ক্রমেই বর্বর হয়ে উঠছে। সরকারদলীয় এই ছাত্রসংগঠনের উন্মত্ত সন্ত্রাসীরা সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে কুপিয়ে হত্যা করে নিরিহ পথচারী যুবক বিশ্বজিতকে- যা স্মরণকালের সব নৃসংসতাকে হার মানিয়েছে। এরপরও তাদের সন্ত্রাসবাদ থেমে নেই। 


আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে লাগামহীন অপরাধ কর্মকাণ্ডে নামে ছাত্রলীগ। ক্যম্পাসে খুনোখুনি, লাগাতার অভ্যন্তরীন তান্ডব, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, বেপরোয়া যৌনসন্ত্রাসের অভিযোগসত্ত্বেও একটি ঘটনারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই। বরং বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রসীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সাথে একজোট হয়েই তাদের জিঘাংসা চরিতার্থ করছে। এতে দিন দিন সংগঠনটিতে অপরাধপ্রবণতা প্রবলতর হচ্ছে। বিগত চারবছরে ছাত্রলীগ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমপক্ষে ৪৫০টি সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটায়। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত জুবায়ের হত্যাকাণ্ডসহ হত্যার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২৪ টি।

সর্বশেষ ১২ জানুয়ারি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা শিক্ষক লাউঞ্জে হামলা চালায়। এতে ৩০ জন শিক্ষক আহত হন। লাঞ্ছিত হন আরও ৪০ জন শিক্ষক। এর দুইদিন আগে বৃহস্পতিবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের এই ছাত্রসংগঠন। এ সময় শিক্ষকদের ওপর এসিড পর্যন্ত ছুড়ে মারে ছাত্রলীগ। 

গত ৯ জানুয়ারি রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে মধ্যরাতে ছাত্রী হোস্টেলে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় আহত হন ১০ ছাত্রী ও ইন্টার্নি চিকিৎসক। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। 
গত বছরের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পদ্মাসেতুর জন্য অর্থসংগ্রহের জের ধরে গোলাগুলির ঘটনায় ১৬ জুলাই আব্দুল্লাহ আল হাসান নামে একছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। 

২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমূল হুদা পলাশের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নৃত্যশিল্পী। ধর্ষণের শিকার নৃত্যশিল্পী সাতক্ষীরা সদর থানায় ছাত্রলীগের ওই দুইনেতার বিরুদ্ধে নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। পুলিশ জানায়, রাত ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানশেষে ওই নৃত্যশিল্পীকে স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতা পলাশ ও জুয়েল হাসান। ধর্ষণের শিকার ওই শিল্পীকে রাত দেড়টার সময় নাজমূল হুদা পলাশের বাসা থেকে বিধ্বস্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার মাত্র একদিন আগে ৩ জানুয়ারি ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের তান্ডবের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে একই বছরের ৩ জানুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও ব্যাংকঅবরোধের সময় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এসময় ১৬ জন নেতা-কর্মী আহত হন। ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলাকালে পাঁচছাত্রীকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। 

৫ জানুয়ারি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফিবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়।

আওয়ামীলীগের গত চারবছরের শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও আতঙ্ক বহাল রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাধিকবার বন্ধ হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ দেশের কমপক্ষে ৭০টি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে বন্ধ হয়ে যায়।

ছাত্রলীগের লাগামহীন অপকর্মের বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু বিষয়টি সতর্কবাণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। সব ধরনের অপকর্মে তারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দলীয় এবং প্রশাসনিক সুবিধা পেয়েছেন। গত বছরের ১০ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, কেউ বিপথে গেলে, সংগঠনের সুনাম নষ্ট করলে ছাড় দেওয়া হবে না। 

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মাথায় আসাদগেটে বিনে পয়সায় খাওয়া নিয়ে হোটেল কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এর জের ধরে তারা সড়কে গাড়ি ভাঙচুর করে। কোন বিরতি ছাড়াই তাদের অপরাধ কর্ম চলেছে সমানগতিতে। অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দলীয় কোন্দলে শক্তিপ্রদর্শনের পাশাপাশি তারা নিজেদেরকে নিয়োজিত করে বিরোধী মতপথ দমনের কাজে। এক্ষত্রে তারা পূর্ণ প্রশাসনিক সহায়তায় ও নিরাপত্তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে গড়ে ওঠা ন্যয়সঙ্গত দাবির আন্দোলনে তাণ্ডব চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। উল্টো মামলা হচ্ছে হামলার শিকারদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ কুয়েটের ঘটনায়ও সশস্ত্র হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মিদের বাদ দিয়ে মামলা করা হয়েছে আহত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিগত চারবছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করে চলেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আড়াইবছরে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষককে মারপিট ও লাঞ্ছিত করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো মাত্র। 

২০১১ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ২৩ নভেম্বর ইউনিফর্ম ছাড়া এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে না দেয়ায় নোয়াখালী সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জুলফিকার হায়দারকে ছাত্রলীগ নেতা সোহরাব ইকবাল লাঞ্ছিত করে। গত বছরের ২২ জানুয়ারি মধ্যরাতে স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতাদের আবাসিক মেয়াদ শেষ হওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হাতে তিনশিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষকরা হলেন, প্রাধ্যক্ষ আজিজুর রহমান, হলের আবাসিক শিক্ষক মাহবুব কায়সার ও অধ্যাপক আশফাক হোসেন। ২২ মার্চ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষসহ তিনজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা।


 এরআগে ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঞ্ছিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষককে। একই বছরের ১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে হামলা চালিয়ে এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত ও ১০ ছাত্রীকে আহত করে ছাত্রলীগ। ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পরদিন থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল এবং ক্যাম্পাসে আধিপত্যবিস্তার নিয়ে শুরু হয় ছাত্রলীগের সংঘাত। এরপর জাবিতে ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের সংঘর্ষে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে উভয়পক্ষ। সেই থেকে নিয়মিত সংঘর্ষে লিপ্ত থেকেছে জাবি ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলকে কেন্দ্র করে ২০১০ সালের ৫ জুলাই দুইগ্রুপের সংঘর্ষে দু’জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। প্রতিপক্ষ ছাত্রদের মারপিট করে ফেলে দেওয়া হয় হলের ৩ তলা ও ৪ তলা থেকে। এরপর থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের নজিরবিহীন তান্ডব।

২০১০ সালের ১৩ জুন যশোর শহরে গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের পর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন পন্ড হয়ে যায়। দু’পক্ষের সংঘর্ষে ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হলেও পরবর্তীতে পুলিশ এই মামলায় কাউকে অভিযুক্ত না করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়। 

২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যা করা হয় ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি শরীফুজ্জামান নোমানীকে। এর পর রাজশাহী পলিটেকনিকে খুন হয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানি। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকর নিহত হয় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের কারণে। ২১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়। ৪ মে ছাত্রলীগের আধিপত্যবিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল পলিটেকনিক কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের দফায় দফায় সশস্ত্র সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়। 


২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১শ’ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়। অভ্যন্তরিন সংঘাতের পাশাপাশি সারাদেশের সরকারি দফতরের টেন্ডারপ্রক্রিয়া চলে যায় ছাত্রলীগের দখলে। চারবছরে টেন্ডার নিয়ে আলোচিত বহু ঘটনা ঘটেছে। দেশের কোথাও প্রকৃত ঠিকাদাররা তাদের সঙ্গে আপোষ ছাড়া দরপত্র কিনতে পারেন না। এর বাইরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস, শপিংমল, ফুটপাত ও বাসস্ট্যান্ডগুলোতে নীরবে এবং প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের নামে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

২০১০ সালেই এক পুলিশ রিপোর্টে ছাত্রলীগের দেড়শতাধিক নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে দখলবাজী, চাঁদাবাজী এবং ছিনতাই কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। 

ছাত্রলীগের সন্ত্রাস নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগকে নিয়ে আর কোনো নেতিবাচক সংবাদ দেখতে চাই না।’ ওইদিন রাতেই শাহবাগে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় দুই সাংবাদিক আহত হন। ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী অপর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টকারী যেই হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। ১৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের নামে সন্ত্রাস বরদাশত করা হবে না।’ এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের অবাধ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শাস্তির সুপারিশ করেছিলেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগ যা করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।’ একই সময়ে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন ‘ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের কারণে আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়।’
কিন্তু নেতাদের এইসব বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি। এরপরও অব্যাহত রয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস। তা প্রতিরোধের বদলে লালন করার অভিযোগ জোরালো হয়েছে। শুধু তাই নয় ছাত্রলীগকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় বিরোধী দল দমনের রাষ্ট্রীয় ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সবশেষ ছাত্রলীগের পৃষ্টপোষকতায় গণজাগরণ মঞ্চ এর উদ্যোগও ইতিমধ্যে বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। কারণ গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান ‍আহবায়ক ইমরান এইচ সরকার হলো ছাত্রলীগের সাবেক নেতা! ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কি ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন নয়? এখন তাদের সকল তৎপরতা শধু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকেন্দ্রিক।

একনজরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড
# প্রতিষ্ঠার পর থেকে খুন করেছে ৬৫ জন ছাত্রকে।
# রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৪০ বছরে খুন ২৯ ছাত্র।
# চারবছরে তাদের সংঘর্ষের কারণে ৬০ টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্কাধারিতকাল বন্ধ থাকে।
# চারবছরে ৮০ জন শিক্ষক শিকিক্ষা লাঞ্ছিত-নির্যাতিত। 

তাই উপরোক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দেশের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করা হোক। তাদের নিষিদ্ধ করা হোক দেশের স্বার্থে, দেশের মেরুদন্ড শিক্ষাব্যবস্থার স্বার্থে। পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হোক। ক্যাম্পাসগুলোতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করে শুধুমাত্র ক্যাম্পাসভিত্তিক কার্যক্রম  চালু করা হোক।তাহলেই আমরা জাতির মেরুদন্ডকে আরো মজবুত করে বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারব।সেদিন আর বেশি দূরে নয় দেশে সুস্থ ও ইতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে লালসবুজের এ দেশ সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে ইনশাল্লাহ। (সূত্র:আমাদের বুধবার)

No comments:

Post a Comment