খুলনা অফিস : ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা ছাত্রশিবির ও সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় ছাত্রশিবির কর্মীসহ ১৫ জন ছাত্র আহত হয়েছে। আহতদেরকে বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার সময় মাদরাসার ছাত্রাবাসের ৪টি কক্ষের দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত খুলনার আলিয়া মাদাসায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর মাদরাসা পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষকরা সভা করে মাদরাসা ও হোস্টেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্ররা জানায়, গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে হোস্টেলে একটি খাসী জবেহ করার জন্য শিক্ষক মাওলানা ইদ্রিস আলী মাদরাসার ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রলীগ কর্মী ফাহাদুজ্জামানকে কামিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বদরুজ্জামানকে ডেকে আনতে বলেন। এ সময় সে বদরুজ্জামানকে ডাক দিয়ে বলে হুজুর ডাকছে। বদরুজ্জামান তখন বলে আমি যাচ্ছি। একটু দেরী হওয়ায় সে বলে বলছি না হুজুর ডাকছে। তখন বদরুজ্জামান বলে আমি যাচ্ছি বলেছি, তারপরও তুমি এভাবে বলছো কেনো? উত্তরে সে বলে কেনো বলছি একটু পরেই বুঝতে পারবি। এই বলে সে চলে যায়। দুপুর ১টার দিকে মহানগর ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও গোপালগঞ্জের একটি মাদরাসার ছাত্র নাঈম ও কর্মী ফাহাদুজ্জামান বহিরাগত ক্যাডার মানিক, ইব্রাহিম, তুহিন, রিয়াজসহ ৩০-৪০ জনকে নিয়ে মাদরাসায় প্রবেশ করে। এ সময় তাদের হাতে রাম দা, ছুরি, হকিস্টিক রড ছিলো। তারা মাদরাসা হোস্টেলের প্রতিটি রুমে তল্লাশি করে এবং হামলা চালায়। তাদের হামলায় ছাত্র এসএম বদরুজ্জামান (কামিল ২য় বর্ষ), রহমাতুল্লাহ (কামিল ২য় বর্ষ), সাবিবর হোসেন (৮ম শ্রেণী), মারুফবিল্লাহ (কামিল ২য় বর্ষ), মহিববুলাহ (কামিল ২য় বর্ষ), গোলাম রসুল (কামিল ২য় বর্ষ), মামুনুর রহমান (কামিল শেষ বর্ষ), এসএম মাহফুজুর রহমান (কামিল ২য় বর্ষ), মোমিনুর রহমান (কামিল ২য় বর্ষ), মাসুমবিল্লাহ (কামিল ২য় বর্ষ)সহ ১৫ জন আহত হয়। আহতদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্র সাবিবর জানায়, দুপুর ১টায় মাদরাসার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ছাত্রলীগ কর্মী ফাহাদুজ্জামান ও নাঈমের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক নিয়ে নতুন ছাত্রাবাসের ৩য় ও ৪র্থ তলায় হামলা চালায়। এ সময় তারা কক্ষের জানালা-দরজা ভাংচুর করে ও কয়েকজনকে মারপিট করে আহত করে। তবে ছাত্রলীগ কর্মী ফাহাদুজ্জামান দাবি করেছে, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তারা নতুন ছাত্রাবাসের কাছে পানি খেতে গিয়েছিল। এ সময় তাদেরকে ডেকে ওপরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা বাধা দিতে এসে তারাও কয়েকজন আহত হন।
মাদরাসার অধ্যক্ষ আ খ ম যাকারিয়া বলেন, সকালে হোস্টেলের একটি ঘটনা নিয়ে জুনিয়র ও সিনিয়র ছাত্রদের ভেতরে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুনিয়রদের পক্ষ নিয়ে বহিরাগতরা হোস্টেলে হামলা চালায়। হামলায় কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও ছাত্রদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ মাদরাসায় এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে মাদরাসা পরিচালনা পরিষদ শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি সভা করা হয়। সভা থেকে মাদরাসা ও হোস্টেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য গবর্নিং বডির সদস্য শেখ আব্দুল্লাহকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম যাকারিয়া, উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, মুফতি আব্দুর রউফ ও বোর্ডের সদস্য এমরান হোসাইন। কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন আজাদ বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ মাদরাসায় যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ঘটনায় কোনো আটক নেই। মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment