Wednesday, February 19, 2014

প্রসঙ্গ : দুই তরুণী হত্যার অভিযোগঃ গ্রুপিংয়ে বিভক্ত ছাত্রলীগ কেউ কারো কথা শোনে না

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৩, ২৭ পৌষ ১৪১৯, ২৭ সফর ১৪৩৪

আবুল খায়ের

দলীয় কোন্দল আর গ্রুপিংয়ে জর্জরিত ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছায়ায় গড়ে ওঠেছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ। এ অবস্থায় সংগঠনবিরোধী ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, ব্যবস্থা নিতে গেলে উপর মহল থেকে আসে ফোন।

সর্বশেষ রাজধানীর পুরনো ঢাকার স্বামীবাগ এলাকায় পানীয়তে বিষ মিশিয়ে দুই তরুণী হত্যার ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতাকর্মীদের বাঁচাতে সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। 

বিজয় দিবসের আগের রাতে অর্থাত্ ১৫ ডিসেম্বর রাতে স্বামীবাগ মিতালী স্কুল প্রাঙ্গণে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছাত্রলীগ সুত্রাপুর থানা শাখার সভাপতি আবু হানিফ সেতু ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ রেজা রিজভীসহ কয়েকজন। অনুষ্ঠান শেষে স্কুলের পাশে এক বাসায় রাতভর চলে মদ ও বিয়ার পানসহ অসামাজিক কার্যকলাপ। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া তিন তরুণী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দয়াগঞ্জ সর্দারপট্টির রেশমা (২৫) পরদিন মারা যায়। এর একদিন পর মারা যায় তার মামাতো বোন তুষি (১৯)। কয়েকদিন অসুস্থ থেকে সেরে উঠেন রুমা (২২)।

মৃত দুই তরুণীর লাশ গোপনে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। পুলিশ প্রশাসনও অদ্ভুত কারণে এই হত্যাকাণ্ডে নিরব থাকে। দুই তরুণীর পরিবারের সদস্যরাও ভয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। 

এ ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি- এর উত্তর জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ওই দুই তরুণী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতারা এক সংসদ সদস্যের ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। তিনি দখলবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করিয়ে নেন ওই দুই ছাত্রলীগ নেতার মাধ্যমে। বিনিময়ে সংসদ সদস্য তাদেরকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। এ কারণে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। 

একই কারণে বিশ্বজিত্ দাস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস ও অপরাধ কর্মকাণ্ড করেও পার পেয়ে গিয়েছিল।

জানা গেছে, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হলেও সে আদেশ কার্যকর করা যায় নি। তাদের তালিকা স্থানীয় পুলিশকে দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি অনুরোধও করে থাকে। কিন্তু ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতা ও এক আওয়ামী লীগ নেতা এ সন্ত্রাসী গ্রুপকে লালন-পালন করে থাকেন। দলীয় কোন নিয়ম-কানুন তারা মানে না। তারা প্রকৃত অর্থে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নন। তারা সাবেক নেতাদের ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কর্মী বলে দাবি করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিশ্বজিতকে আঘাত করার সময় সে হিন্দু ও কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নয় বলে পরিচয় দেয়। প্রকৃত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলে বিশ্বজিত্ নিজের হিন্দু পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিত। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে ঢালী নামে এক সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ পরিচয়ে দীর্ঘদিন কক্ষ দখল করে আসছে। মদ-বিয়ারসহ মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন তিনি। তাকে নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক ছাত্রলীগ এক নেতা, যিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা। এ নেতার কারণে তাকে হল থেকে বের করা সম্ভব হয়নি বলে এক নেতা জানিয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধেও গ্রুপিংয়ের অভিযোগ আছে। 

ঢাকা কলেজের সামনে মার্কেট ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকায় ১০ জনকে সমপ্রতি ছাত্রলীগ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি বহিষ্কার করে। তাদেরকে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ হল থেকে বের করতে পারছে না। এক নেতার গ্রুপের সদস্য ওই বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি নিউ মার্কেট থানার এক এসআইও বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের সঙ্গে চাঁদাবাজি করে আসছেন। ওই এসআই ফেনসিডিল সরবরাহ করে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের। অভিযুক্ত এসআইয়ের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এক শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার হয়নি বলে উক্ত নেতা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি পর্যন্ত এক আওয়ামী লীগ নেতার কারণে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে পারছে না। নেতার পছন্দ হচ্ছে, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও টেন্ডারবাজির মতো কর্মে দক্ষ ও সাহসীদের। এ কারণে হল কমিটি গঠন বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। হাই কমান্ডের চারপাশে জামায়াত শিবির সমর্থনকারী নেতা কর্মী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজসহ অপরাধের সঙ্গে জড়িত অনুপ্রবেশকারী গ্রুপ নিয়ন্ত্রণকারি নেতারাই রয়েছেন। তাদের সংখ্যা কম। কিন্তু ছাত্রলীগের প্রভাব পড়েছে দেশব্যাপী। হাই কমান্ডকে ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঐ সব নেতারা অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নিয়ে জনগণের কাছে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন । গোয়েন্দাদের মধ্যে একশ্রেণীর কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে তথ্য না দিয়ে প্রকৃত নেতাকর্মীদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য হাই কমান্ডের কাছে দেয়া হয়ে থাকে। এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।

ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেছেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ছাত্রলীগে ঠাঁই নেই। যদি কেউ সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকে, তাদের ব্যবস্থা নিতে কোন ধরনের বিলম্ব হয় না। ছাত্রলীগে নিষ্ঠাবান ও মেধাবীদের একমাত্র স্থান বলে তিনি জানান।১


No comments:

Post a Comment