Tuesday, February 25, 2014

ঢাবিতে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলা আহত ৫০ গ্রেফতার ৩

গতকাল সোমবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নবনির্বাচিত কমিটি ঢাবি ভিসি আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দীক
এর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের তান্ডবে তা পন্ড হয়ে যায়।
ছাত্রদল কর্মী কয়েকজন আগে-ভাগে ভিসি কার্যালয়ের সামনে হাজির হলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাদের
বেদম মারধর করে-সংগ্রাম

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয়াবাদী ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। তবে ছাত্রদলের দাবি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলায় ৫০ জন ছাত্রদল কর্মী আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার ক্যাম্পাসের মূল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, দুপুর ২টায় ছাত্রদলের নতুন কমিটির সাথে ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিকের সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা ছিল। সাক্ষাৎকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবে এজন্য সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে পাহারা বসায় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টায় মূল চত্বরে ছাত্রদলের কর্মীদেরকে পেয়ে ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আহতরা হলেন, আববাস আলী, সোহাগ ও রাশেদ। আববাস ও সোহাগ স্যার সলিমুল্লাহ হল এবং রাশেদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্র। এছাড়া আহত অন্যান্যরা হলেন, রুহুল আমিন সোহেল, মাহমুদুল হক হিমেল, আবুবকর সিদ্দিক পাভেল, ছাত্রদল নেতা মুন্না, মাহফুজ, শ্রাবণ, মিরাজসহ আরও কয়েকজন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এসময় দু'জনের মোটর সাইকেল ভাংচুর করে তারা। এছাড়া রেজিস্ট্রার ভবনে প্রায় ২০ কর্মীকে আটক করে রাখা হয়। আটককৃত ছাত্রদল নেতারা হলেন, শাখাওয়াত হোসেন, ওয়াহিদ, আশিক, রিপন, রাজু, পাবেল, হিমেল, মাহফুজ, পলাশ, সাগর, শ্রাবণ, নিরব, মুরাদ ও এফ রহমানের হল নেতা মুন্না। ছাত্রদলের দাবি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. আমজাদ আলীর প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন কর্মীকে গুম করার জন্য রেজিস্ট্রার ভবনে আটক করে রাখা হয়েছে।
ছাত্রদলের ওপর হামলার ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে ক্যাম্পাস শূন্য হয়ে যায়। তবে ছাত্রলীগ মধুর ক্যান্টিন, মূল চত্বরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করে। এদিকে ছাত্রদলের কর্মীদের রেজিস্ট্রার ভবনে আটক রাখার খবর পেয়ে বিএনপি সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষকরা দৌড়ে আসেন। পরে মিডিয়ার সহযোগিতায় ছাত্রদলের আটক কর্মীদের উদ্ধার করেন। এসময় প্রক্টর ও সাদা দলের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের ওপর আবারো হামলা চালায়।
পরে তাদেরকে প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়িতে করে নিরাপদে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে বিকাল সাড়ে তিনটায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক। এসময় তিনি বলেন, ওপেন ডোর পলিসির আলোকে যে কেউ আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে। ছাত্রদল যদি চায় তারাও পারবে। ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রদলের ওপর হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে প্রক্টরিয়াল বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে ছাত্রদল। বিকাল সাড়ে ৪টায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,  বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রদলের সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এস এম ওবায়দুল হক নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মহিদুল ইসলাম হিরু, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজসহ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রদল উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, ‘৩ সেপ্টেম্বর আমাদের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি গঠন হয়েছে। রাজনৈতিক রীতি অনুযায়ী আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার জন্য ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্লাস ও পরীক্ষার দিকে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় ৫০ জন ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে আহত করে। এছাড়াও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।'
তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। পুলিশ পাহারায় ছাত্রলীগ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হামলা করছে আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই ভিসির স্বপদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।'
এস এম ওবায়দুল হক নাসির বলেন, ‘ভিসির সঙ্গে আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে চাইলে ছাত্রলীগ নৈরাজ্যজনক ও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এক দলীয় ভিসি। আর তাই ছাত্রদল তিন বছর ধরে ক্যাম্পাসের কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারছে না। তার আচরণে মনে হয় তিনি দলীয় ভিসি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে প্রবেশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে নইলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।'
সাংবাদিক সম্মেলনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও গ্রেফতারকৃত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করা হয়।
ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ঢুকবে কিনা জানতে চাইলে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী  এ্যানি সাংবাদিকদের বলেন,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ছাত্রদলের প্রবেশে যদি ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি না করে তবে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে ক্যাম্পাসে ঢুকবে ছাত্রদল।
এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আরও এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি আহত নেতা-কর্মীদের সুচিকিৎসার দাবি জানান।


No comments:

Post a Comment