Saturday, February 22, 2014

হেফাজতের মিছিলে গুলি করা সেই যুবলীগ ক্যাডার মাসুম এখন সন্ত্রাস নির্মূলের দায়িত্বে

চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে গুলি করা যুবলীগ ক্যাডার ও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী দিদারুল আলম মাসুম এখন সন্ত্রাস নির্মূল কমিটির সদস্য। এ নিয়ে জনমনে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। 

গত ৮ এপ্রিল পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে যুবলীগ ক্যাডার ও এক সময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী দিদারুল আলম মাসুম তার সহযোগিদের নিয়ে নিরস্ত্র হেফাজতকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় মাসুমের হাতে দেখা যায় পুলিশ ব্যবহার করে এমন একটি শট গান। যেটি সেসময় প্রায় সবকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে ছবিসহ প্রকাশিত হয়। যা প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তবে এতসব অপকর্মের পরও বীরদর্পে তার বিচরণে চট্টগ্রামবাসী শঙ্কিত হলেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তার ওপর বেজায় খুশি। এর পুরস্কার হিসেবে তাকে লালখান বাজার ওয়ার্ডের সন্ত্রাস নির্মূল কমিটির সদস্য করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আসন্ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 
দিদারুল আলম মাসুমের বিরুদ্ধে খুন, রাহাজানিসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার নামে। 

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সময়ে (৯৬-২০০০) সালে মাসুম তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে লালখানবাজার এলাকায় জায়গা দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দিদারুল আলম মাসুম পালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান। মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে তার ব্যবসা-বাণিজ্যও। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফের দেশে ফিরে আসেন মাসুম। বিভিন্ন সময়ে তার নামে দায়ের হওয়া একাধিক মামলা সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের সুপারিশ নিয়ে প্রতাহার করিয়ে নিতেও সক্ষম হন মাসুম। দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে থাকাকালীন সময়ে তার ডেরায় শক্ত অবস্থান গড়েন আরেক নগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ মাহমুদ। দেশে ফেরার পর মাসুম তার হৃতরাজ্য ফিরে পেতে এবং এলাকার আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ফরিদ মাহমুদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মাসুম। আধিপত্যের দ্বন্দ্বে তাদের মধ্যে একাধিকবার বন্দুকযুদ্ধও হয়েছে। কয়েক বছর আগেও মাসুম ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাধিক মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি পুলিশের তালিকা থেকেও নাম কাটিয়ে নেন মাসুম। শুধু তাই নয়, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজ নামে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও বাগিয়ে নেন তিনি। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের গ্রুপিং রাজনীতিতে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিপক্ষ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিনের সঙ্গে যুক্ত দিদারুল আলম মাসুম। চট্টগ্রামের লালখানবাজার এলাকায় তার নিজের একটি ক্যাডার বাহিনীও রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

মাসুমের দাবি, তার কাছে আছে মাত্র একটি শটগান। অস্ত্রটি লাইসেন্স করা। এ অস্ত্র নিয়ে ৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহর সামনে হেফাজতকর্মীদের লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি চালায় মাসুম। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ায় এলাকাবাসী ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও মাসুম নির্বিকার। এখন আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া ও দুর্ধর্ষ।
গতকাল নগরীর লালখানবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে তরুণকর্মীদের মাঝে ‘মাসুম ভাই’ বেশ জনপ্রিয়। এলাকার সভা-সমাবেশে মাসুমের স্বচ্ছন্দ বিচরণ। যে মাসুম এলাকার কোনো সভা-সমাবেশে বক্তব্য তো দূরের কথা, যাওয়াটাও ছিল অপরাধ। কারণ তার গায়ে ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমা। সে মাসুমই এখন বড় নেতা। 

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এক আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী-ছাত্রলীগের মিছিলে গ্রামবাসীর হামলায় আহতদের দেখতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে যাওয়ার সময় মাসুমকে সঙ্গে নিয়ে যান। তিনি হাসপাতালে আহতদের মাঝে মাসুমের সাহসিকতার প্রশংসা করেন। এরপর মাসুম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও প্রেস ক্লাবের সামনে গণজাগরণ মঞ্চেও বক্তব্য রাখেন।
হেফাজতে ইসলামের লালখানবাজার মাদরাসা উত্খাতে সচেষ্ট এখন মাসুম। এলাকা হেফাজতমুক্ত করার জন্য সাহসী মাসুমের কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেছেন খোদ মন্ত্রী আফসারুল আমিনও।
মাসুম বলেন, আমার নামে ১৮টি মামলার কোনোটিই প্রমাণ হয়নি। হেফাজত যখন ওয়াসা মোড় ইসলামী চত্বর আখ্যায়িত করে তা দখল করতে চাইল তখন সাহসের সঙ্গে আমি মোকাবিলা করি। এলাকা হেফাজতমুক্ত করি। তাই আফসার ভাই আমার প্রশংসা করেছেন।
মাসুম বলেন, হেফাজত যেভাবে মাঠে নেমেছে তাদের কাছ থেকে দেশ রক্ষার জন্য অস্ত্রের কোনো বিকল্প ছিল না। 

এদিকে প্রকাশ্যে গুলি করার পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে রক্ষায় শেল্টার দিচ্ছেন। পুলিশ এখন তার বাড়িতেই নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাতে তার কোনো সমস্যা না হয়। কারণ মাসুম নাকি হেফাজতের হুমকিতে আছেন। তাই থানায় মাসুম একটি জিডি করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এখন মাসুমকে শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এভাবে গুলি করার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা কেন নেয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বলেন, দিদারুল আলম মাসুমের ব্যবহৃত অস্ত্রটি লাইসেন্স করা এবং আত্মরক্ষার্থেই মাসুম সেদিন গুলি চালিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলোয় তিনি জামিনে আছেন। তাই তাকে গ্রেফতার বা আইনের আওতায় আনার প্রয়োজন নেই। 

রাজপথে প্রকাশ্যে যুবলীগ ক্যাডার দিদারুল আলম মাসুমের সশস্ত্র অবস্থান এবং গুলি বর্ষণের পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সন্ত্রাস নির্মূলের দায়িত্বে থাকায় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

No comments:

Post a Comment