জানু. 28, 2014
দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের তিন শতাধিক পেশাদার সন্ত্রাসী বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। সংঘর্ষ, খুন, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, শিক্ষক ও ডাক্তার নির্যাতনসহ হেন অপকর্ম নেই যেগুলোর সঙ্গে এদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে না। এলাকায় এরা সবাই দাগী সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত। সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতেও তাদের নামে রয়েছে একাধিক খুন, হত্যা ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলা। অনেকেই থানার এহাজারভুক্ত আসামি। কখনও কখনও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করা হয়। সরকারের গত চার বছরে ২৪ ছাত্রহত্যার সঙ্গে এসব পেশাদার সন্ত্রাসীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এমনকি নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা পর্যন্ত এদের ব্যবহার করে থাকে। সরকারের মন্ত্রীরা এসব সন্ত্রাসীর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একেবারেই নির্বিকার। অনেক সময় এসব সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রধারী এক ক্যাডার গুরুতর আহত হওয়ার পর ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হলে স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর অস্ত্রধারী ওই সন্ত্রাসী তাকিমকে দেখতে গেলে সংবাদ মাধ্যমে তিনি ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন।
প্রভাবশালীদের আশ্রয় পাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এসব দাগি সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কখনও তাদের নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও প্রভাবশালীরা তাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে সহায়তা করে থাকে। ক্যাম্পাসের ‘টেরোরিস্ট’ হিসেবে পরিচিতি থাকায় এদের সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে চরম আতঙ্ক। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে কেউ কিছু বলতেও সাহস পায় না। কোনো কোনো শিক্ষাঙ্গনে আবাসিক হলের বড় রুম দখল করে এরা ক্যাম্পাসেই অবস্থান করে থাকে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধান এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
তাছাড়া ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ ও বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সংঘটিত সংঘর্ষে এবং হলতালের সময় হরতাল সমর্থিতদের ওপর সশস্ত্র হামলা ও মহড়া দেয়ার সময় এদের সামনের সারিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। অনেক সময় আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও এদের হামলা চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীহ শিশু রাব্বিকে গুলি করে হত্যা, পুরান ঢাকার চাঞ্চল্যকর নিরীহ পথচারী বিশ্বজিত্ দাসকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জোবায়ের হত্যা, রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর এসিড নিক্ষেপ, এমসি কলেজ হোস্টেল পুড়িয়ে দেয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলোতে অস্ত্র হাতে পেশাদার এসব সন্ত্রাসীর মুখ্য ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এদের প্রত্যেকের কাছে প্রকাশ্যে পিস্তলসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেলেও দলীয় চাপের কারণে পুলিশ প্রশাসন দেখেও অনেকটা না দেখার ভান করে তাদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি এড়িয়ে যায়। মতের বাইরে গেলে অনেক সময় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও এসব সন্ত্রাসীর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। যে কারণে সারাদেশে এদের অপকর্মের কারণে লাগাম টেনে ধরতে পারছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংগঠন। অনেক সময় লোক দেখানোর জন্য নামকাওয়াস্তে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও পরে এদেরই দলে টানা হয়। আবার কখনও বহিষ্কৃৃত থেকেই ছাত্রত্ব না থাকলেও ছাত্রলীগকে এরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসব চিহ্নিত ও দাগি সন্ত্রাসীর কর্মকাণ্ডের কারণে দীর্ঘ ৬৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটির ভাবমূর্তি বর্তমানে অনেকটাই ক্ষুণ্ন হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে এখন মূর্ত এক আতঙ্কের নাম ছাত্রলীগের এসব পেশাদার সন্ত্রাসী। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের ১৫-২০ জনের একটি স্পেশাল টিম রয়েছে যারা ক্যাম্পাসের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করে থাকে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : সম্প্রতি বিরোধী দলের হরতালের সময় পুরান ঢাকার নিরীহ ব্যবসায়ী বিশ্বজিত্ দাসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের অপারেশনে অংশ নেয়াদের অধিকাংশই এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। ঘটনার পর যাদের ছবি ও ভিডিওচিত্র প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের পেশাদার সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিতি। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও তৈরি করা হয়েছে এদের আমলনামা। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এরাই মূলত পুরান ঢাকার অপরাধের মূল হোতা। তাদের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশনও রয়েছে। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে তারা। তাদের মধ্যে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে থানায় মামলা। তারা নিয়মিত ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিত। এরকম প্রায় অর্ধশতাধিক পেশাদার সন্ত্রাসী রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রফিকুল ইসলাম শাকিল (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ষষ্ঠ সেমিস্টার)। সেই মূলত বিশ্বজিেক চাপাতি দিয়ে কোপায়। সে জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা রয়েছে। আরেকজন নূরে আলম লিমন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) বিশ্বজিত্ হত্যাসহ ক্যাম্পাসের আশপাশে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাহফুজুর রহমান নাহিদ (বাংলা) বিশ্বজিত্ হত্যা ও হত্যাচেষ্টা, মারামারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এয়াড়া ইমদাদুল হক (দর্শন), ওবায়দুল কাদের তাহসিন (মনোবিজ্ঞান), রাশেদুল হাসান শাওন ওরফে কিলার (ইতিহাস), কক্স মামুন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), মামুন (মনোবিজ্ঞান), চাপাতি শাকিল, নাহিদ (বাংলা), এইচএম কিবরিয়া (মনোবিজ্ঞান), কাইয়ুম মিয়া টিপু (মনোবিজ্ঞান), ওবায়দুল (মনোবিজ্ঞান), ইউনুছ (সমাজবিজ্ঞান), কাইলা এমদাদ (দর্শন), রাজন তালুকদার (রসায়ন), আল-আমিন, উজ্জ্বল অন্যতম। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গত চার বছরে ছাত্রলীগের ৭১ জনকে সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি পেশাদার টিম রয়েছে। চরমপন্থী হিসেবেও এলাকায় রয়েছে এদের পরিচিতি। এর মধ্যে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন, আশিকুর রহমান জাপান, মাহমুদ হাসান লেনিন (ব্যবস্থাপনার প্রাক্তন ছাত্র) ও তৌফিকুর রহমান হিটলার, মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল (অর্থনীতির প্রাক্তন ছাত্র), মিজানুর রহমান টিটু (ইংরেজি), আরিফুল ইসলাম আরিফ (বাংলা), আশরাফুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস), জনি আবদুর রহমান (বাংলা), শফিক আহম্মেদ (আইন), রাসেল জোয়ার্দার (আরবি ভাষা ও সাহিত্য), সজীব আহম্মেদ (আইন), সঞ্জয় বিশ্বাস (আইন), সাজন মৃধা (আইসিই), জেএম ইলিয়াছ (রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন), বহিরাগত পিকুল ওরফে বোমা পিকুল, তারেক, হায়দার, রেন্টু ও সনাতন উল্লেখযোগ্য। এসব পেশাদার সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অস্ত্র, বিস্ফোরক, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলা রয়েছে। তাছাড়া গত ১৯ নভেম্বর ও ১২ জানুয়ারি শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনার সময় এসব ক্যাডার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালায়। এদের প্রত্যেকের কাছেই রয়েছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে পেশাদার হিসেবে। ক্যাম্পাসে ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তেমন পরিচালিত না হলেও ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কাজে এরা জড়িত। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলে আনোয়ার, রব্বানী, লেনিন, মুরাদ; মুহসীন হলে বিপ্লব, মেহেদী, তুষার, বাপ্পী; একুশে হলে রাকিব, মিরাজ, শরিফ, রাশেদ; জগন্নাথ হলে কাঞ্চন বিশ্বাস, শিশির, উত্পল, সঞ্জয় বাড়ৈ; জিয়া হলে প্রিন্স, মঞ্জু; জসীমউদ্দীন হলে মেহেদী, আল আমিন; সূর্যসেন হলে আরিফ, শিমুল; এফ রহমান হলে সায়েম, রনি; জহুরুল হক হলে রিফাত এবং এসএম হলের আনোয়ার হোসেন আনু, সুজন উল্লেখযোগ্য।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ গ্রুপে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। এর বাইরেও ক’জন রয়েছে—যারা পেশাদার সন্ত্রাসী হিসেবেই বেশি পরিচিত। এদের মধ্যে ক’জনের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে হত্যা, ডাকাতি, থানার অস্ত্র লুট, অস্ত্র ব্যবসা, একাধিক হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও রয়েছে। এর মধ্যে সভাপতি গ্রুপের এস এম তৌহিদ আল হোসেন ওরফে তুহিন (সাংগঠনিক সম্পাদক), যুবায়ের ইবনে তানিম (মাদার বক্স হল সভাপতি), নাসিম আহম্মেদ সেতু (উপ-পাঠাগার সম্পাদক), খালিদ হাসান নয়ন, সাধারণ সম্পাদক সমর্থক সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম (বর্তমানে অসুস্থ), সুদীপ্ত সালাম ওরফে বাইট্টা সালাম (যুগ্ম সম্পাদক), সৌরভ (নৃ-বিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষ), আতিকুর রহমান (উপ-দফতর সম্পাদক), মামুন, কৌশিক ও রুবেল উল্লেখযোগ্য।
এদের মধ্যে তুহিন ছাত্রলীগ নেতা সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি। সে গত বছর রাজশাহীর ভদ্রা এলাকায় সংঘটিত একটি বাড়িতে ডাকাতি মামলারও আসামি। ২ অক্টোবর শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তুহিনই কখনও পিস্তল, কখনও রামদা হাতে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়িয়েছে। তবে বর্তমানে সে নতুন কমিটির দাবিতে সভাপতি-সম্পাদকের বিরোধিতা করছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত তাকিম। রাজনীতি করতে গিয়ে ক্লাসে ন্যূনতম দিন উপস্থিত না থাকার কারণে দর্শন বিভাগ থেকে ছাত্রত্ব হারিয়েছে। এরপরও বিপুর ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে অবাধে টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও যৌন হয়রানির মতো অপকর্ম চালিয়েছে তাকিম। এর বাইরে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ জামান রকি, রকিবুল হাসান রকি, আরিফুর রহমান ২০১১ সালে টাকা ও স্বর্ণমূর্তির লোভে রাবি শিক্ষকের ভাইকে হোটেল থেকে অপহরণ করে পদ্মা পাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে পদ্মায় লাশ ভাসিয়ে দেয়। ছাত্রলীগের এসব ক্যাডারা বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হলে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : বাকৃবি ক্যাম্পাসের ত্রাস হিসেবে পরিচিত কয়েকজনের মধ্যে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সমর্থিত কেদ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পারভেজ আনোয়ার, প্রভাবশালী ক্যাডার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ রিপন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এসএম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত ক্যাডার মানিকজোড় শাহীন মাহমুদ ও আসাদুজ্জামান খোকন ওরফে খোকা, বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি তপু, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক আল আমীন, সহ-সভাপতি নুর আলম সরকার, মো. আবু রায়হান, মঞ্জুরুল ইসলাম, শাহজাদা কায়সার ও রাশেদুল ইসলাম খোকন উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি গুলি করে শিশু রাব্বি হত্যাসহ ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকার সব অপকর্মের হোতা এরাই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডার রাকিব হোসেন, শিহাবুল হাসান ভূঁইয়া সাকিব, মাহমুদুল হাসান তুষার, পীযুষ কান্তি বর্মণ, মনসুর আলী, আবু তৈয়ব ও রবিনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : এখানকার ১০-১২ জনের মধ্যে রয়েছে আসাদুজ্জামান আসাদ সাইদ, টোকাই হাফিজ (যুগ্ম আহ্বায়ক), নাইমুল হাসান, (যুগ্ম আহ্বায়ক), চয়ন বড়ুয়া, অঞ্জন, তারেক, সোহরাব, শিমুল, উত্তম দাস, পার্থ, রাজিব ও আকবর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : এখানে অস্ত্রবাজ হিসেবে পরিচিত ১০-১৫ জনের মধ্যে সুমন, রেজা, (সাবেক সাধারণ সম্পাদক), আজগর আলী, নিয়ামুল পারভেজ, তিলন এন্ড্রোর, মহিবউল্লাহ, রাজীব আহমেদ, রাসেল, সাব্বির আলম (বর্তমানে শিক্ষক), আকরাম, অরূপ, জাহিদ, অভি, তপু, আরিফ, সম্রাট শাকিল ও মিথুন কুণ্ড উল্লেখযোগ্য। এরা সবাই পেশাদার সন্ত্রাসী হেসেবে পরিচিত।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : এই ক্যাম্পাসে ৭ থেকে ৮ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল, মুন্না, শামীম, রোজ, পলাশ, জামিলের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল আজিক খান সজিব হত্যাসহ রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : জাবেদ আজাদ নিশাদ, হিমাংশু মণ্ডল, রবিউল আলম মিলন, নাজমুল হক, দেবাশীষ দাস, মারজানা ইসলাম স্বপ্না, আবদুল কাইয়ুম, জান্নাতুল হাসান নিপুন, মির্জা মোবাশ্বের হক, গোলাম সরওয়ার, হুমায়ুন কবির ও অরুন চন্দ্র রায়।
ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় : খন্দকার এনামুল হক শুভ, রবিউল ইসলাম, প্রীতম মজুমদার, ছোট আরিফ, বড় আরিফ, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সুকান্ত, হাসিব, রূপম, মিজান, শাকিব, শিহাব ও শামসু নুর।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় : জয় চক্রবর্তী, সজীব খান, নজরুল ইসলাম বাবু, ফাহাদুজ্জামান শিবলী, নূরে রাকিব, সাব্বি আহমেদ, অপু খন্দকার, আবু নাসের নইমকে দেখে ভয় পায় ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদে দেশে আরও ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২৬৯টি সরকারি কলেজে বর্তমানে অনার্স-মাস্টার্স কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে এগুলোর মধ্যে পুরনো ১৯টি জেলায় অবস্থিত প্রায় ৩০টি কলেজে কমবেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে। এরমধ্যে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা রয়েছে ৮৯টিতে। প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা ও ৬০টির মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এ দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানেই কমবেশি পেশাদার সন্ত্রাসী রয়েছে ছাত্রলীগের। যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ।
ছাত্রলীগের বক্তব্য : যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ছাত্রলীগে কোনো পেশাদার সন্ত্রাসী নেই দাবি করে বলেন, ছাত্রলীগ দেশে ইতিবাচক রাজনীতি করে। এ সংগঠনের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো দূরতম সম্পর্ক নেই। পুরান ঢাকার বিশ্বজিত্, বাকৃবিতে রাব্বি, রাবিতে সোহেল, নাসিম, জাবিতে যোবায়ের হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলোর সঙ্গে ছাত্রদল ও শিবির কর্মীরা জড়িত। তাদের আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা দলে অনুপ্রবেশকারী। এদের চিহ্নিত করে দল থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমও একই মন্তব্য করেন।
জানু. 28, 2014
দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের তিন শতাধিক পেশাদার সন্ত্রাসী বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। সংঘর্ষ, খুন, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, শিক্ষক ও ডাক্তার নির্যাতনসহ হেন অপকর্ম নেই যেগুলোর সঙ্গে এদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে না। এলাকায় এরা সবাই দাগী সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত। সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতেও তাদের নামে রয়েছে একাধিক খুন, হত্যা ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলা। অনেকেই থানার এহাজারভুক্ত আসামি। কখনও কখনও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করা হয়। সরকারের গত চার বছরে ২৪ ছাত্রহত্যার সঙ্গে এসব পেশাদার সন্ত্রাসীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।


প্রভাবশালীদের আশ্রয় পাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এসব দাগি সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কখনও তাদের নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও প্রভাবশালীরা তাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে সহায়তা করে থাকে। ক্যাম্পাসের ‘টেরোরিস্ট’ হিসেবে পরিচিতি থাকায় এদের সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে চরম আতঙ্ক। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে কেউ কিছু বলতেও সাহস পায় না। কোনো কোনো শিক্ষাঙ্গনে আবাসিক হলের বড় রুম দখল করে এরা ক্যাম্পাসেই অবস্থান করে থাকে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধান এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
তাছাড়া ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ ও বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সংঘটিত সংঘর্ষে এবং হলতালের সময় হরতাল সমর্থিতদের ওপর সশস্ত্র হামলা ও মহড়া দেয়ার সময় এদের সামনের সারিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। অনেক সময় আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও এদের হামলা চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীহ শিশু রাব্বিকে গুলি করে হত্যা, পুরান ঢাকার চাঞ্চল্যকর নিরীহ পথচারী বিশ্বজিত্ দাসকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জোবায়ের হত্যা, রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর এসিড নিক্ষেপ, এমসি কলেজ হোস্টেল পুড়িয়ে দেয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলোতে অস্ত্র হাতে পেশাদার এসব সন্ত্রাসীর মুখ্য ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এদের প্রত্যেকের কাছে প্রকাশ্যে পিস্তলসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেলেও দলীয় চাপের কারণে পুলিশ প্রশাসন দেখেও অনেকটা না দেখার ভান করে তাদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি এড়িয়ে যায়। মতের বাইরে গেলে অনেক সময় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও এসব সন্ত্রাসীর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। যে কারণে সারাদেশে এদের অপকর্মের কারণে লাগাম টেনে ধরতে পারছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংগঠন। অনেক সময় লোক দেখানোর জন্য নামকাওয়াস্তে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও পরে এদেরই দলে টানা হয়। আবার কখনও বহিষ্কৃৃত থেকেই ছাত্রত্ব না থাকলেও ছাত্রলীগকে এরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসব চিহ্নিত ও দাগি সন্ত্রাসীর কর্মকাণ্ডের কারণে দীর্ঘ ৬৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটির ভাবমূর্তি বর্তমানে অনেকটাই ক্ষুণ্ন হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে এখন মূর্ত এক আতঙ্কের নাম ছাত্রলীগের এসব পেশাদার সন্ত্রাসী। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের ১৫-২০ জনের একটি স্পেশাল টিম রয়েছে যারা ক্যাম্পাসের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করে থাকে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : সম্প্রতি বিরোধী দলের হরতালের সময় পুরান ঢাকার নিরীহ ব্যবসায়ী বিশ্বজিত্ দাসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের অপারেশনে অংশ নেয়াদের অধিকাংশই এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। ঘটনার পর যাদের ছবি ও ভিডিওচিত্র প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের পেশাদার সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিতি। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও তৈরি করা হয়েছে এদের আমলনামা। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এরাই মূলত পুরান ঢাকার অপরাধের মূল হোতা। তাদের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশনও রয়েছে। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে তারা। তাদের মধ্যে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে থানায় মামলা। তারা নিয়মিত ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিত। এরকম প্রায় অর্ধশতাধিক পেশাদার সন্ত্রাসী রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রফিকুল ইসলাম শাকিল (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ষষ্ঠ সেমিস্টার)। সেই মূলত বিশ্বজিেক চাপাতি দিয়ে কোপায়। সে জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা রয়েছে। আরেকজন নূরে আলম লিমন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) বিশ্বজিত্ হত্যাসহ ক্যাম্পাসের আশপাশে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাহফুজুর রহমান নাহিদ (বাংলা) বিশ্বজিত্ হত্যা ও হত্যাচেষ্টা, মারামারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এয়াড়া ইমদাদুল হক (দর্শন), ওবায়দুল কাদের তাহসিন (মনোবিজ্ঞান), রাশেদুল হাসান শাওন ওরফে কিলার (ইতিহাস), কক্স মামুন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), মামুন (মনোবিজ্ঞান), চাপাতি শাকিল, নাহিদ (বাংলা), এইচএম কিবরিয়া (মনোবিজ্ঞান), কাইয়ুম মিয়া টিপু (মনোবিজ্ঞান), ওবায়দুল (মনোবিজ্ঞান), ইউনুছ (সমাজবিজ্ঞান), কাইলা এমদাদ (দর্শন), রাজন তালুকদার (রসায়ন), আল-আমিন, উজ্জ্বল অন্যতম। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গত চার বছরে ছাত্রলীগের ৭১ জনকে সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি পেশাদার টিম রয়েছে। চরমপন্থী হিসেবেও এলাকায় রয়েছে এদের পরিচিতি। এর মধ্যে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন, আশিকুর রহমান জাপান, মাহমুদ হাসান লেনিন (ব্যবস্থাপনার প্রাক্তন ছাত্র) ও তৌফিকুর রহমান হিটলার, মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল (অর্থনীতির প্রাক্তন ছাত্র), মিজানুর রহমান টিটু (ইংরেজি), আরিফুল ইসলাম আরিফ (বাংলা), আশরাফুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস), জনি আবদুর রহমান (বাংলা), শফিক আহম্মেদ (আইন), রাসেল জোয়ার্দার (আরবি ভাষা ও সাহিত্য), সজীব আহম্মেদ (আইন), সঞ্জয় বিশ্বাস (আইন), সাজন মৃধা (আইসিই), জেএম ইলিয়াছ (রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন), বহিরাগত পিকুল ওরফে বোমা পিকুল, তারেক, হায়দার, রেন্টু ও সনাতন উল্লেখযোগ্য। এসব পেশাদার সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অস্ত্র, বিস্ফোরক, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলা রয়েছে। তাছাড়া গত ১৯ নভেম্বর ও ১২ জানুয়ারি শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনার সময় এসব ক্যাডার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালায়। এদের প্রত্যেকের কাছেই রয়েছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে পেশাদার হিসেবে। ক্যাম্পাসে ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তেমন পরিচালিত না হলেও ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কাজে এরা জড়িত। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলে আনোয়ার, রব্বানী, লেনিন, মুরাদ; মুহসীন হলে বিপ্লব, মেহেদী, তুষার, বাপ্পী; একুশে হলে রাকিব, মিরাজ, শরিফ, রাশেদ; জগন্নাথ হলে কাঞ্চন বিশ্বাস, শিশির, উত্পল, সঞ্জয় বাড়ৈ; জিয়া হলে প্রিন্স, মঞ্জু; জসীমউদ্দীন হলে মেহেদী, আল আমিন; সূর্যসেন হলে আরিফ, শিমুল; এফ রহমান হলে সায়েম, রনি; জহুরুল হক হলে রিফাত এবং এসএম হলের আনোয়ার হোসেন আনু, সুজন উল্লেখযোগ্য।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ গ্রুপে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। এর বাইরেও ক’জন রয়েছে—যারা পেশাদার সন্ত্রাসী হিসেবেই বেশি পরিচিত। এদের মধ্যে ক’জনের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে হত্যা, ডাকাতি, থানার অস্ত্র লুট, অস্ত্র ব্যবসা, একাধিক হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও রয়েছে। এর মধ্যে সভাপতি গ্রুপের এস এম তৌহিদ আল হোসেন ওরফে তুহিন (সাংগঠনিক সম্পাদক), যুবায়ের ইবনে তানিম (মাদার বক্স হল সভাপতি), নাসিম আহম্মেদ সেতু (উপ-পাঠাগার সম্পাদক), খালিদ হাসান নয়ন, সাধারণ সম্পাদক সমর্থক সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম (বর্তমানে অসুস্থ), সুদীপ্ত সালাম ওরফে বাইট্টা সালাম (যুগ্ম সম্পাদক), সৌরভ (নৃ-বিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষ), আতিকুর রহমান (উপ-দফতর সম্পাদক), মামুন, কৌশিক ও রুবেল উল্লেখযোগ্য।
এদের মধ্যে তুহিন ছাত্রলীগ নেতা সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি। সে গত বছর রাজশাহীর ভদ্রা এলাকায় সংঘটিত একটি বাড়িতে ডাকাতি মামলারও আসামি। ২ অক্টোবর শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তুহিনই কখনও পিস্তল, কখনও রামদা হাতে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়িয়েছে। তবে বর্তমানে সে নতুন কমিটির দাবিতে সভাপতি-সম্পাদকের বিরোধিতা করছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত তাকিম। রাজনীতি করতে গিয়ে ক্লাসে ন্যূনতম দিন উপস্থিত না থাকার কারণে দর্শন বিভাগ থেকে ছাত্রত্ব হারিয়েছে। এরপরও বিপুর ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে অবাধে টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও যৌন হয়রানির মতো অপকর্ম চালিয়েছে তাকিম। এর বাইরে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ জামান রকি, রকিবুল হাসান রকি, আরিফুর রহমান ২০১১ সালে টাকা ও স্বর্ণমূর্তির লোভে রাবি শিক্ষকের ভাইকে হোটেল থেকে অপহরণ করে পদ্মা পাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে পদ্মায় লাশ ভাসিয়ে দেয়। ছাত্রলীগের এসব ক্যাডারা বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হলে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : বাকৃবি ক্যাম্পাসের ত্রাস হিসেবে পরিচিত কয়েকজনের মধ্যে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সমর্থিত কেদ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পারভেজ আনোয়ার, প্রভাবশালী ক্যাডার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ রিপন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এসএম রায়হান, সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত ক্যাডার মানিকজোড় শাহীন মাহমুদ ও আসাদুজ্জামান খোকন ওরফে খোকা, বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি তপু, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক আল আমীন, সহ-সভাপতি নুর আলম সরকার, মো. আবু রায়হান, মঞ্জুরুল ইসলাম, শাহজাদা কায়সার ও রাশেদুল ইসলাম খোকন উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি গুলি করে শিশু রাব্বি হত্যাসহ ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকার সব অপকর্মের হোতা এরাই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডার রাকিব হোসেন, শিহাবুল হাসান ভূঁইয়া সাকিব, মাহমুদুল হাসান তুষার, পীযুষ কান্তি বর্মণ, মনসুর আলী, আবু তৈয়ব ও রবিনের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : এখানকার ১০-১২ জনের মধ্যে রয়েছে আসাদুজ্জামান আসাদ সাইদ, টোকাই হাফিজ (যুগ্ম আহ্বায়ক), নাইমুল হাসান, (যুগ্ম আহ্বায়ক), চয়ন বড়ুয়া, অঞ্জন, তারেক, সোহরাব, শিমুল, উত্তম দাস, পার্থ, রাজিব ও আকবর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : এখানে অস্ত্রবাজ হিসেবে পরিচিত ১০-১৫ জনের মধ্যে সুমন, রেজা, (সাবেক সাধারণ সম্পাদক), আজগর আলী, নিয়ামুল পারভেজ, তিলন এন্ড্রোর, মহিবউল্লাহ, রাজীব আহমেদ, রাসেল, সাব্বির আলম (বর্তমানে শিক্ষক), আকরাম, অরূপ, জাহিদ, অভি, তপু, আরিফ, সম্রাট শাকিল ও মিথুন কুণ্ড উল্লেখযোগ্য। এরা সবাই পেশাদার সন্ত্রাসী হেসেবে পরিচিত।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : এই ক্যাম্পাসে ৭ থেকে ৮ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল, মুন্না, শামীম, রোজ, পলাশ, জামিলের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল আজিক খান সজিব হত্যাসহ রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : জাবেদ আজাদ নিশাদ, হিমাংশু মণ্ডল, রবিউল আলম মিলন, নাজমুল হক, দেবাশীষ দাস, মারজানা ইসলাম স্বপ্না, আবদুল কাইয়ুম, জান্নাতুল হাসান নিপুন, মির্জা মোবাশ্বের হক, গোলাম সরওয়ার, হুমায়ুন কবির ও অরুন চন্দ্র রায়।
ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় : খন্দকার এনামুল হক শুভ, রবিউল ইসলাম, প্রীতম মজুমদার, ছোট আরিফ, বড় আরিফ, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সুকান্ত, হাসিব, রূপম, মিজান, শাকিব, শিহাব ও শামসু নুর।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় : জয় চক্রবর্তী, সজীব খান, নজরুল ইসলাম বাবু, ফাহাদুজ্জামান শিবলী, নূরে রাকিব, সাব্বি আহমেদ, অপু খন্দকার, আবু নাসের নইমকে দেখে ভয় পায় ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদে দেশে আরও ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২৬৯টি সরকারি কলেজে বর্তমানে অনার্স-মাস্টার্স কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে এগুলোর মধ্যে পুরনো ১৯টি জেলায় অবস্থিত প্রায় ৩০টি কলেজে কমবেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে। এরমধ্যে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা রয়েছে ৮৯টিতে। প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা ও ৬০টির মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এ দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানেই কমবেশি পেশাদার সন্ত্রাসী রয়েছে ছাত্রলীগের। যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ।
ছাত্রলীগের বক্তব্য : যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ছাত্রলীগে কোনো পেশাদার সন্ত্রাসী নেই দাবি করে বলেন, ছাত্রলীগ দেশে ইতিবাচক রাজনীতি করে। এ সংগঠনের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো দূরতম সম্পর্ক নেই। পুরান ঢাকার বিশ্বজিত্, বাকৃবিতে রাব্বি, রাবিতে সোহেল, নাসিম, জাবিতে যোবায়ের হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলোর সঙ্গে ছাত্রদল ও শিবির কর্মীরা জড়িত। তাদের আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা দলে অনুপ্রবেশকারী। এদের চিহ্নিত করে দল থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমও একই মন্তব্য করেন।
No comments:
Post a Comment